Wednesday, January 29, 2025

দিল্লির ‘গায়ানা গেম’: ৫৬ বছর পর ব্রাজিলের প্রতিবেশী গায়ানায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী কেন?

Share

গায়ানা গেম

গায়ানা, দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট এক দেশ, যা তার প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষত তেলের ভান্ডারের জন্য আলোচনার কেন্দ্রে। ৫৬ বছর পর, ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদী এই দেশে সফর করায় আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়েছে। এটি শুধুই একটি রাজনৈতিক সফর নয়, বরং ভারতের কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ, যা ভবিষ্যতের বিশ্ববাজারে ভারতের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করতে পারে।

গায়ানার প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব

গায়ানার অর্থনীতির মেরুদণ্ড হল এর তেলের ভান্ডার। ২০১৫ সালে প্রথমবার তেলের খনি আবিষ্কৃত হয়, যা দেশটির অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গায়ানার মাটির নিচে ১১০০ কোটি ব্যারেলের বেশি তেল মজুত রয়েছে। এটি বিশ্বের মোট খনিজ তেলের প্রায় ১৮ শতাংশ। ২০২৭ সালের মধ্যে গায়ানার দৈনিক তেল রফতানির পরিমাণ ৯ লাখ ব্যারেল ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

তেলের এই বিপুল মজুত গায়ানাকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে দেশটির জিডিপি বৃদ্ধির হার রেকর্ড ছুঁয়েছে। ২০২২ সালে গায়ানার অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬২ শতাংশ, যা বিশ্বে নজিরবিহীন।

ভারতের দৃষ্টিতে গায়ানা

ভারত, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারী দেশ, দীর্ঘদিন ধরেই গায়ানার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার চেষ্টা করছে। ২০২৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর সফর এই প্রচেষ্টারই একটি অংশ। সফরের সময়, গায়ানার প্রধানমন্ত্রী ইরফান আলি মোদীকে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় সম্মান প্রদান করেন এবং তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।

গায়ানার তেলের খনির উপর অধিকার অর্জনের জন্য ভারত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভারতের পেট্রলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী গায়ানার প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী বিক্রম ভরতের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে অপরিশোধিত তেলের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়।

এছাড়াও, ভারতের বিভিন্ন সংস্থা গায়ানার তেল অনুসন্ধানে অংশ নিতে আগ্রহী। গায়ানা সরকার যেখানে নিলামের মাধ্যমে চুক্তি করতে আগ্রহী, সেখানে ভারত সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে চুক্তি চায়। সম্প্রতি, দু’দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা এই সম্পর্ককে আরো মজবুত করবে।

গায়ানার অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভারতের বিনিয়োগ

তেল ছাড়াও, ভারতের নজর গায়ানার অন্যান্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের দিকেও রয়েছে। ভারত গায়ানার প্রতিরক্ষা খাতে সাহায্য করছে। উদাহরণস্বরূপ, মোদী সরকার গায়ানাকে দুটি ডর্নিয়ার-২২৮ বিমান উপহার দিয়েছে। এ ছাড়া ফার্মা, বায়োফুয়েল, এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করছে।

ভারত গায়ানার অবকাঠামোগত উন্নয়নেও সাহায্য করছে। কোভিড মহামারির সময় গায়ানায় টীকা সরবরাহ করার পাশাপাশি, সৌরশক্তি চালিত ট্র্যাফিক আলো এবং জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা

গায়ানার প্রাকৃতিক সম্পদের উপর ভারতের পাশাপাশি চিনও নজর দিয়েছে। বেজিং ইতিমধ্যেই ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পের মাধ্যমে গায়ানায় তাদের উপস্থিতি বাড়িয়েছে। পাল্টা, নয়াদিল্লি ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে গায়ানার রাজধানী জর্জটাউনের উন্নয়নে কাজ করছে।

৪৩.৫ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের ভূমিকা

গায়ানার জনসংখ্যার ৪৩.৫ শতাংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। ব্রিটিশ শাসনামলে তাঁদের পূর্বপুরুষরা কৃষিকাজে বাধ্য হয়ে এই দেশে এসেছিলেন। এই বিশাল ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করাও ভারতের প্রধান উদ্দেশ্য।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তেলের দামে অস্থিরতা বেড়েছে। ভারত বর্তমানে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কিনলেও, বিকল্প জোগান নিশ্চিত করতে গায়ানার দিকে হাত বাড়িয়েছে। এই সফর শুধু তেলের জন্য নয়, বরং ভারত-গায়ানা সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।

গায়ানা সফর ভারতের বৈশ্বিক অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করবে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ভারতের প্রভাব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Read more

Local News