দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে বর্তমানে এক ভিন্ন ধরনের আতঙ্ক বিরাজমান। ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র আগমনে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে দেওয়া হচ্ছে না, আর জেলা প্রশাসন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাইকিংয়ের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সুরক্ষিত থাকার নির্দেশ দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে, দিঘা, বকখালি, ও সাগরের মতো জনপ্রিয় সৈকতগুলো একেবারে শুনশান হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে দিঘার সমুদ্রসৈকতের দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল, সময় থমকে গেছে। সৈকতে থাকা পর্যটকদের একটি অংশ ইতিমধ্যেই হোটেল ছেড়ে চলে গেছে, তবে কিছু পর্যটক এখনও হোটেলে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তারা সমুদ্রের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলেও বাঁশের ব্যারিকেড তাদের পথ আটকে দেয়। জেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে, কেউ যেন সমুদ্রে নামতে না পারে, সেজন্য তারা কড়া নজরদারি চালাচ্ছে।
বকখালিতেও একই ছবি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সেখানে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্রশাসন ইতোমধ্যে বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত করেছে এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে গ্রামবাসীদের সরানোর কাজ শুরু হবে, যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারেন।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি জানিয়েছেন, “দিঘা, মন্দারমনি, তাজপুর, ও শঙ্করপুরের উপকূলবর্তী এলাকা কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ, নুলিয়া ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সদস্যরা নিয়মিত টহল দিচ্ছে। আমরা নিশ্চিত করছি যে, পর্যটক এবং স্থানীয় মৎস্যজীবীরা নিরাপদে থাকবেন।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারেও সকাল থেকে ফেরি সার্ভিস বন্ধ রাখা হয়েছে। রায়চক এবং কুকড়াহাটির মধ্যে নৌকা চলাচল বন্ধ রয়েছে। ডায়মন্ড হারবার মহকুমা শাসকের দফতরে খোলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম, যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং কুইক রেসপন্স টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবারের ঘটনা উল্লেখ করে জানা যায়, দিঘার সৈকত নিরাপত্তার জন্য দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। বুধবার প্রশাসন হোটেল মালিকদের নির্দেশ দেয় যাতে তারা হোটেলগুলি খালি করে দেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাকদ্বীপ, সাগর, বকখালি, ও দিঘায় মাইকিং করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রশাসন টোটোয় মাইক বেঁধে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই জেলায় নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী অনেককে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে, দিঘার হোটেল থেকে ঝড়ের প্রভাব দেখার সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন কিছু পর্যটক। তবে জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে চাইছে না। মঙ্গলবার গঙ্গাসাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটে অসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা মাইকিং করে মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করেছেন। ইতিমধ্যে যারা সমুদ্রে চলে গেছেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেওয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থায় প্রায় দেড় লক্ষ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুই জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে, এবং মাঝে মাঝে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। তবে সমুদ্রের পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত রয়েছে। জেলা প্রশাসন পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে পিছপা হচ্ছে না এবং যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনের এই তৎপরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়গুলির অভিজ্ঞতার আলোকে তারা যে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে, তা প্রত্যাশিতভাবে কার্যকর হবে বলেই মনে হচ্ছে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের এই উদ্যোগ কার্যত সময়োপযোগী, কারণ নিরাপদে থাকাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
এদিকে, প্রশাসনের উদ্যোগে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ চলছে। এর ফলে আগামী দিনগুলিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সকলের জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক হলেও, প্রশাসন যে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তা অনেকটা স্বস্তি প্রদান করছে।
সর্বশেষে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে সকলকে সচেতন থাকতে হবে এবং সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা প্রত্যেকের দায়িত্ব। দিঘার সৈকতের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের চেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়।