দাবানলের মাঝে চুরি ১৭টি ট্রফি, গাড়ি!
লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানল, যা শহরের বিশাল অংশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, সেখানে বহু মানুষ প্রাণ ও সম্পত্তি হারিয়েছেন। দাবানলের কারণে ঘরবাড়ি, গাড়ি, মূল্যবান সম্পদ অনেকেরই চলে গেছে। এই ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হয়েছেন প্রাক্তন টেনিস খেলোয়াড় পাম শ্রিভারও। ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাবের মালিক, শ্রিভার, লস অ্যাঞ্জেলেসের নিজের বাড়ি থেকে মূল্যবান ট্রফি এবং পদক হারিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর গাড়িও চুরি হয়ে গেছে এই ঘটনায়।
ভয়াবহ দাবানল এবং অবাধ লুঠপাট
বহু লস অ্যাঞ্জেলেসবাসীর মতো শ্রিভারও বাধ্য হন নিজের বাড়ি ফেলে চলে যেতে, কারণ দাবানলের আগুন ক্রমেই ঘিরে ফেলছিল শহরটিকে। চারদিকে ছাইয়ের পাহাড়, এবং বিভিন্ন বাড়ির পোড়া কঙ্কাল দাঁড়িয়ে ছিল বিপজ্জনকভাবে। এই বিপদের মধ্যে, একদিকে যেমন মানুষ জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছিল, অপরদিকে দুষ্কৃতিরা সুযোগ পেয়ে ফাঁকা বাড়িগুলিতে অবাধে লুঠপাট চালাচ্ছিল।
শ্রিভার জানান, তিনি কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন। তাঁর গাড়িতে ছিল ইউএস ওপেনের পাঁচটি ট্রফি, ফরাসি ওপেনের পাঁচটি প্লেট, উইম্বলডনের পাঁচটি ট্রফি, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের একটি ট্রফি, এবং টেনিস হল অফ ফেমের একটি ট্রফি। এসব রেখে তিনি বাড়ির মধ্যে কিছু জিনিস রাখতে গিয়েছিলেন, কিন্তু বাইরে এসে দেখেন, তাঁর গাড়িটি চুরি হয়ে গেছে। গাড়ির মধ্যে থাকা সমস্ত মূল্যবান ট্রফি, পদক সব কিছুই লুট হয়ে যায়।
শ্রিভারের হতাশা এবং দুঃখ
শ্রিভার আরও জানান, তিনি যেসব ট্রফি হারিয়েছেন, তা তার ক্যারিয়ারের এক অসামান্য অর্জন। একদিকে তিনি নিজের ক্যারিয়ারের মূল্যবান স্মৃতি হারিয়েছেন, অন্যদিকে দাবানল এবং চুরির ফলে পুরো পরিস্থিতি আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, “বহু মানুষ আজ জীবনের কঠিনতম সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেরই সম্পদ নষ্ট হয়ে গেছে, বাড়িঘর পুড়ে গেছে। সবাই যখন এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে, তখন এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক।”
শ্রিভার ৬২ বছর বয়সে এসে নিজের ক্যারিয়ারের মূল্যবান স্মৃতিগুলি হারানোতে গভীরভাবে হতাশ। তবে তিনি বলেন, “এটা শুধু আমার ক্ষতি নয়, পুরো শহরের এবং অনেক মানুষেরই জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।”
টেনিস ক্যারিয়ারে শ্রিভারের অসাধারণ সাফল্য
পাম শ্রিভার ১৯৭৯ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত পেশাদার টেনিস খেলেছেন এবং তাকে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডাবলস খেলোয়াড় হিসেবে ধরা হয়। ২১টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম শিরোপা জয়ের পাশাপাশি, ১৯৮৮ সালে অলিম্পিকে সোনাও জয় করেছিলেন তিনি। ট্যুর ফাইনালে ১০ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি, ফেড কাপের দুটি জয়ী দলের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮৪ সালে চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামে ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন, এবং বিশ্বের এক নম্বর মহিলা ডাবলস খেলোয়াড় ছিলেন।
তবে সিঙ্গলসে শ্রিভারের সাফল্য কম ছিল। তাঁর সেরা র্যাঙ্কিং ছিল ৩, এবং ১৯৭৮ সালে ইউএস ওপেনের সিঙ্গলস ফাইনালে পৌঁছেছিলেন, যা ছিল তাঁর সেরা সিঙ্গলস ফলাফল।
এক অমোচনীয় ক্ষতি
শ্রিভারের জন্য এই চুরি ছিল শুধু ট্রফি হারানোর ঘটনা নয়, বরং এক অসাধারণ কেরিয়ারের স্মৃতিরও শেষ হয়ে যাওয়ার মতো। এসব ট্রফি তার ৩০ বছরের কঠোর পরিশ্রম এবং অসামান্য সাফল্যের প্রতীক। কিন্তু দাবানল ও চুরির কারণে এসব হারানোর শোক শ্রিভারকে শুধু শোকাহতই করেনি, বরং এই বিপর্যয়ের মধ্যে তার নিজের ক্যারিয়ার এবং সংগ্রামের মূল্যও নিঃশেষিত হয়ে গেছে।
যদিও তিনি এই কঠিন সময়ের মধ্যে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সবাইকে সহানুভূতির বার্তা দিয়েছেন, কিন্তু যেটুকু হারিয়েছেন, সেটি কোনোভাবেই পূর্ণ করা সম্ভব নয়।
সইফ আলি খানকে কুপিয়েছে এই ব্যক্তি? সিসিটিভি-তে ধরা পড়ল অভিযুক্তের ছবি