দানা র তাণ্ডব
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার জনজীবন। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কলকাতা এবং ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর। পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে ৩০০-এর বেশি উড়ান এবং ৫৫০-এর বেশি ট্রেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক হয়রানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে আগেভাগেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর বন্ধ: ৩০০ উড়ান বাতিল
কলকাতা এবং ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বুধবারই ঘোষণা করেছিলেন যে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র কারণে বিমান পরিষেবা স্থগিত রাখা হবে। কলকাতা বিমানবন্দর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং তা শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেও পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ঘণ্টার জন্য।
প্রতি দিন গড়ে কলকাতা থেকে ৪০০টি এবং ভুবনেশ্বর থেকে ১০০টি বিমান ওঠানামা করে। এত বিপুল সংখ্যক বিমান বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি দেখা দিতে পারে। তবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আগেভাগেই যাত্রীদের বিমান বাতিলের কথা জানিয়েছে, যাতে তাঁদের মধ্যে কোনও ধরণের বিশৃঙ্খলা বা অসুবিধা না ঘটে।
রেল পরিষেবায় বিপর্যয়: ৫৫০ ট্রেন বাতিল
বিমানবন্দরের পাশাপাশি রেল পরিষেবাও ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে চলেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৫০টিরও বেশি এক্সপ্রেস ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব রেল বাতিল করেছে ১৫০টি ট্রেন। ইস্টকোস্ট রেলওয়ে বাতিল করেছে ১৯৮টি ট্রেন এবং পূর্ব রেল বাতিল করেছে ২০০টিরও বেশি ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেলও বাতিল করেছে আরও কিছু ট্রেন।
ইস্টকোস্ট রেলের মধ্যে অন্যতম প্রধান ট্রেনগুলির মধ্যে রয়েছে হাওড়া-সেকেন্দরাবাদ, শালিমার-পুরী, কামাখ্যা-বেঙ্গালুরু, নয়াদিল্লি-ভুবনেশ্বর, হাওড়া-ভুবনেশ্বর এবং শালিমার-হায়দরাবাদ। এর পাশাপাশি পূর্ব রেল বাতিল করেছে পটনা-এর্নাকুলাম এক্সপ্রেস, কলকাতা-পুরী, ডিব্রুগড়-কন্যাকুমারী, বেঙ্গালুরু-গুয়াহাটি-সহ আরও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেন।
লোকাল ট্রেন পরিষেবায় ব্যাপক প্রভাব
শুধু দূরপাল্লার ট্রেনই নয়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাতিল হয়েছে বহু লোকাল ট্রেনও। শিয়ালদহ দক্ষিণ এবং হাসনাবাদ শাখায় ১৯০টিরও বেশি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এই শাখায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ১৪ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। হাওড়া স্টেশন থেকেও বাতিল করা হয়েছে বেশ কয়েকটি লোকাল ট্রেন, যার মধ্যে বর্ধমান, ব্যান্ডেল, শেওড়াফুলি এবং শ্রীরামপুর লোকাল রয়েছে। এছাড়াও, ব্যান্ডেল থেকে কাটোয়া শাখার বেশ কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও প্রস্তুতি
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ উপকূলের দিকে আরও শক্তি বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে। ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মধ্যরাত থেকে শুক্রবার সকালের মধ্যে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামারার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। ঝড়ের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রশাসনও প্রস্তুত রয়েছে।
কলকাতা ও ভুবনেশ্বরে স্থানীয় প্রশাসন ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আগাম সতর্কতা হিসেবে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর বন্ধের সময়সীমা নির্ধারণ করার পাশাপাশি যাত্রীদের সময়মতো পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। ভুবনেশ্বরেও একই ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
রেলের তরফে ট্রেন বাতিলের ঘোষণার ফলে যাত্রীরা যেন সময়মতো অন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন, তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে এত সংখ্যক উড়ান এবং ট্রেন বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের মধ্যে অসুবিধার সম্ভাবনা রয়েই যাচ্ছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি
প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইতিমধ্যেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। উপকূল অঞ্চলের মানুষজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র তাণ্ডবের মধ্যে দিয়ে প্রশাসনের এই তৎপরতা এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে জনজীবনের সুরক্ষা।