দক্ষিণ কোরিয়ার বিমান দুর্ঘটনায়!
দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ১৭৯ জন। শুধু দু’জন বিমানকর্মীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ এবং ঘটনাপ্রবাহ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম এবং রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, জেজু এয়ারের এই বিমানটি ব্যাঙ্কক থেকে ফিরছিল। তাতে ১৭৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন বিমানকর্মী ছিলেন। মুয়ান বিমানবন্দরে অবতরণের সময়ে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার খুলতে ব্যর্থ হয়। পাইলট বিমানের নিয়ন্ত্রণ হারালে, এটি রানওয়ের উপর ঘষটাতে শুরু করে।
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা যায়, বিমানটি রানওয়ে পেরিয়ে বিমানবন্দরের পাঁচিলে সজোরে ধাক্কা খেয়ে মুহূর্তেই আগুনে ভস্মীভূত হয়। এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেও অনেকে বিমানের ভেতর থেকে আতঙ্কে আপৎকালীন দরজা খুলে ঝাঁপ দেন।
যাত্রীদের আতঙ্কে মৃত্যু
বিমানের চাকা না খোলার খবর যাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তেই ভেতরে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। জানলা দিয়ে পরিস্থিতি দেখার পর অনেকেই নিরাপত্তার কথা ভুলে জরুরি দরজা খুলে নীচে ঝাঁপ দেন। কেউ বিমানের নিচে চাপা পড়ে, কেউবা নীচে পড়ে গুরুতর আঘাতে মারা যান।
আগুন ধরার পর ভেতরে আটকে পড়া বহু যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে ধোঁয়ার দমবন্ধ অবস্থায় বা ঝলসে।
দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান এবং গুরুত্ব
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১৮১ জনের মধ্যে মাত্র দু’জন বিমানকর্মী বেঁচে আছেন। এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এর আগেও, ২৫ ডিসেম্বর আজ়ারবাইজান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান রাশিয়াগামী পথে কাজ়াখস্তানে ভেঙে পড়ে। ওই দুর্ঘটনায় ৬৭ জন যাত্রীর মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে আরও একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার খবর সামনে আসায় বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানের অবতরণের সময়ই ভেতরে কিছু গোলযোগের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। যাত্রীরা জানলা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখেন, চাকা খোলেনি। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভেতরে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু হয়।
অনেকে আতঙ্কে আপৎকালীন দরজা খুলে ঝাঁপ দেন, যা বিপর্যয়কে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের এমন পদক্ষেপ মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ এবং শিক্ষা
এই দুর্ঘটনা বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার বড়সড় ত্রুটির দিকে আঙুল তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারের ত্রুটি নিয়ে আরও বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। পাইলট এবং বিমানকর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের সঠিক নির্দেশনা দেওয়া এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানোর মূলমন্ত্র হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, দুর্ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত শুরু হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এবং বিমান সংস্থাগুলি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন বিশ্বজুড়ে মানুষ।

