তৃণমূলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ
তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে শোকজ় করেছে দল। দলীয় সূত্রের খবর, বিতর্কিত মন্তব্য করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগে তাঁকে তিন দিনের মধ্যে এই নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বুধবার বিধানসভায় এসে এই শোকজ়ের কথা জানতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন হুমায়ুন।
বিতর্কিত মন্তব্যে দলীয় অসন্তোষ
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, দল সম্পর্কে প্রকাশ্যে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে। কিন্তু বিধায়ক হুমায়ুন কবীর সেই নির্দেশ লঙ্ঘন করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে থাকা কয়েকজন নেতার ওপর আমার সন্দেহ আছে। তাঁরা কি সত্যিই মমতার দীর্ঘমেয়াদী শাসন চান?” এমন মন্তব্যে শাসকদলের অস্বস্তি বাড়ে।
হুমায়ুন আরও যোগ করেন, “আমি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নেতা মানি। ভবিষ্যতে আমাকে দল টিকিট না দিলেও আমি অপকর্মের জবাব দেব।” এসব মন্তব্য দলীয় শৃঙ্খলার সঙ্গে সরাসরি বিরোধিতার ইঙ্গিত বহন করে।
শৃঙ্খলা রক্ষায় মমতার কড়া বার্তা
সোমবার কালীঘাটে তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের ভেতর শৃঙ্খলা বজায় রাখার কড়া বার্তা দেন। তিনি জানান, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে প্রথমে শোকজ় করা হবে। একই ভুল বারবার করলে বহিষ্কারও হতে পারে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হুমায়ুন বিতর্কিত মন্তব্য করে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের রোষে পড়েন।
হুমায়ুনের রাজনৈতিক যাত্রা
হুমায়ুন কবীরের রাজনৈতিক জীবন নানা মোড় নিয়েছে। তিনি একসময় কংগ্রেসের অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ২০১১ সালে রেজিনগর থেকে কংগ্রেসের হয়ে বিধায়ক নির্বাচিত হন। পরে ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে মন্তব্য করায় তাঁকে তৃণমূল থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এরপর তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করে তৃণমূল প্রার্থীকে তৃতীয় স্থানে পাঠান। এমনকি বিজেপিতে যোগ দিয়ে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পদ্মফুলের প্রতীকে প্রার্থী হন। তবে ভোটে হেরে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন।
দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্নে বারবার বিতর্ক
হুমায়ুন কবীরের নানা মন্তব্য আগে থেকেই তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। বহরমপুরে লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থী ইউসুফ পাঠানকে “বহিরাগত প্রার্থী” বলে সমালোচনা করেছিলেন। পরে মিটমাট হলেও দলীয় নেতারা তাঁর আচরণ নিয়ে সতর্ক ছিলেন।
হুমায়ুনের প্রতিক্রিয়া
শোকজ় প্রসঙ্গে হুমায়ুন বলেন, “আমি কোনো শোকজ় চিঠি হাতে পাইনি। তবে শুনেছি আমাকে শোকজ় করা হয়েছে। দলের যদি আমার কথায় অস্বস্তি হয়, তার জবাব আমি দেব।”
তৃণমূলে শৃঙ্খলারক্ষা নতুন দৃষ্টান্ত
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস দলীয় শৃঙ্খলারক্ষায় কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হুমায়ুনের শোকজ় সেই কঠোর নীতির প্রথম উদাহরণ। শীর্ষ নেতৃত্বের সাফ বার্তা, দলীয় নির্দেশ লঙ্ঘন বরদাস্ত করা হবে না। বারবার শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে বহিষ্কারের মতো কঠোর পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে।
হুমায়ুন কবীরের মতো বিতর্কিত মন্তব্যকারী নেতাদের প্রতি এই বার্তা তৃণমূলের ভেতর শৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।