তিব্বতে ভয়াবহ ভূমিকম্প
তিব্বতের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৬। চিন অধিকৃত দক্ষিণ-পশ্চিম তিব্বতের জ়োগো জনপদ ও ডিরিং কাউন্টির বিস্তীর্ণ এলাকায় এই প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভয়াবহ ক্ষতি করেছে। আহত হয়েছেন ১৮৮ জন। মঙ্গলবার সকালে ঘটে যাওয়া এই ভূমিকম্পে ছ’হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
তীব্রতা নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য
ভূমিকম্পের তীব্রতা নিয়ে চিন এবং আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক সংস্থাগুলির তথ্য একেবারেই মিলছে না। চিনের ‘চায়না আর্থকোয়েক নেটওয়ার্ক সেন্টার’ জানিয়েছে, ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৬.৮ রিখটার স্কেলে। অন্যদিকে, আমেরিকার ইউএসজিএস দাবি করেছে, কম্পনের মাত্রা অন্তত ৭.১ রিখটার। উচ্চমাত্রার এই ভূমিকম্পের প্রভাব নেপাল, ভুটান এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও অনুভূত হয়েছে।

প্রভাবিত অঞ্চল ও ক্ষয়ক্ষতির চিত্র
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল জিগাজে শহরের লাগোয়া জ়োগো এলাকায়, যা মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে অবস্থিত। জিগাজে শহরটি বৌদ্ধ ধর্মগুরু পাঞ্চেন লামার মঠের জন্য বিখ্যাত, যা দলাই লামার পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। নেপালের খুম্বু অঞ্চলের লোবুৎসে থেকে জিগাজের দূরত্ব মাত্র ৯০ কিলোমিটার। ভূমিকম্পের ফলে এই অঞ্চলের বহু ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
জ়োগো জনপদের মোট জনসংখ্যা প্রায় সাত হাজার। ডিরিং কাউন্টিতে বাস করেন ৬২ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের বড় অংশই এই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বহু মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারি কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভূমিকম্পের সময়কাল ও আফটার শক
মঙ্গলবার সকালে প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয় স্থানীয় সময় ৯টা ৫ মিনিটে। এরপর অঞ্চলটিতে একাধিকবার আফটার শক হয়। রিখটার স্কেলে আফটার শকের সর্বোচ্চ মাত্রা ছিল ৪.৪। ভূমিকম্পের কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রবল আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
ধ্বংসের মর্মান্তিক চিত্র
জ়োগো জনপদে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষ তাঁদের ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। উদ্ধারকাজ শুরু হলেও ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা বহু মানুষের জীবিত অবস্থায় বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্রমশ কমছে। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ত্রাণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব ও উদ্বেগ
তিব্বতের ভূমিকম্পের প্রভাব শুধু এই অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ভূমিকম্পের তীব্রতা নেপাল, ভুটান এবং ভারতের সিকিমেও অনুভূত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তিব্বত, নেপাল এবং ভারতের সিকিম অঞ্চলটি একটি সক্রিয় ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, যা এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
উদ্ধারকাজ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জিনহুয়া সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, সরকারি আধিকারিকরা দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত মানুষকে উদ্ধারের জন্য তৎপরতা চলছে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছানো এবং উদ্ধার কার্যক্রমে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে।
উপসংহার
তিব্বতের ভয়াবহ ভূমিকম্প শুধু স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিপর্যয় হয়ে আসেনি, বরং এই অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক স্থিতিশীলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। চিন ও আমেরিকার তথ্যের মধ্যে পার্থক্য বিষয়টিকে আরও জটিল করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রদানই এখন প্রধান লক্ষ্য। প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলায় উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও সতর্কতা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে এল।

