Sunday, April 6, 2025

তিন মাসের দুঃস্বপ্ন: ‘ডাইনি’র কৌশানি জানালেন বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা

Share

ডাইনি!

ওয়েব সিরিজ ‘ডাইনি’ ইতিমধ্যেই দর্শকদের মনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই সিরিজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ‘লতা’, যিনি গ্রামবাসীদের অন্যায়ের শিকার হন, সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন কৌশানি মুখোপাধ্যায়। তবে শুধু পর্দার গল্প নয়, বাস্তব জীবনেও একসময় কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন এই অভিনেত্রী। তিনিও একসময় মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন, যেখানে কথা বলার বা প্রতিবাদ করারও সাহস ছিল না।

‘ডাইনি’তে কাজ করতে গিয়ে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি

এই ওয়েব সিরিজে কাজ করতে গিয়ে কৌশানি উপলব্ধি করেছেন, শুধুমাত্র পুরনো দিনের ‘ডাইনি’ অপবাদই নয়, আজও সমাজে নারীদের ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চলে। আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন—

“হয়তো এখন আর ডাইনি বলে পুড়িয়ে মারা হয় না, কিন্তু প্রতিনিয়ত চারপাশের নারীরা, প্রান্তিক মানুষরা অন্যভাবে অত্যাচারিত হচ্ছেন।”

এই সিরিজের অভিজ্ঞতা তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে তার নিজের জীবনের এক অন্ধকার অধ্যায়।

তিন মাসের দুঃস্বপ্ন

এক সময় এক অচেনা পুরুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল কৌশানির। প্রথমে মনে হয়েছিল, তিনি এক ভালো মানুষ, বন্ধুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বাসযোগ্য। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন, তিনি আসলে এক ধরণের মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন।

“প্রায় তিন-চার মাস ধরে আমি মানসিকভাবে অবদমিত ছিলাম। কথা বলার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছিলাম। এমনকি শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। মনে হতো, একটা চক্রব্যূহে আটকে গেছি, যেখান থেকে বেরোনোর কোনো উপায় নেই।”

প্রথমে বিষয়টি তিনি কাউকে জানাননি, কারণ ভয় ও সংকোচ ছিল। মনে হয়েছিল, তিনি নিজেই সামলে উঠতে পারবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বুঝতে পারেন, এই নীরবতাই তাকে আরও দুর্বল করে তুলছে।

বন্ধুদের সাহায্যে ফিরে আসা

অবশেষে কৌশানি তার বন্ধুদের সঙ্গে নিজের যন্ত্রণার কথা ভাগ করে নিতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি শক্তি ফিরে পান এবং সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।

কৌশানি বলেন—

“আমি আসলে প্রথমে বুঝতেই পারিনি যে এই মানুষটির আসল উদ্দেশ্য কী। এটা প্রেম ছিল না, কিন্তু সে এমনভাবে আমার বিশ্বাস অর্জন করেছিল যে আমি তার কৌশল বুঝতে পারিনি। তারপর সে ধীরে ধীরে আমাকে আমার পরিবার ও কাছের মানুষদের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করেছিল। এমনকি ফোনে ও মেসেজেও অশ্লীল মন্তব্য করতে শুরু করে। একদিন যখন আমি প্রতিবাদ করি, তখন সে শারীরিকভাবেও আক্রমণ করে।”

এই ঘটনার পর মানসিকভাবে সুস্থ হতে অনেক সময় লেগেছে কৌশানির। তিনি বলেন,

“এই অভিজ্ঞতা থেকে আমি শিখেছি, কেউ যদি কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়ে, তাহলে দ্রুত সাহায্য চাওয়া উচিত। একা লড়াই করা কঠিন।”

প্রতিবাদের শক্তি অর্জন

এখন, এই ঘটনার পর কৌশানি অনেক বেশি শক্তিশালী ও সচেতন। তিনি মনে করেন, ভবিষ্যতে যদি এমন কোনো পরিস্থিতি আসে, তাহলে তিনি দ্রুত ও সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করতে পারবেন।

“আমি এখন বুঝতে পেরেছি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে চুপ থাকা কখনোই সমাধান নয়। আমি চাই, কেউ যদি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়, তাহলে সে ভয় না পেয়ে সাহসের সঙ্গে প্রতিবাদ করুক।”

অভিনয়ে অন্যরকম অভিজ্ঞতা

নাটকের মঞ্চ থেকে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন কৌশানি। ‘ডাইনি’-তে লতার চরিত্রে অভিনয় করে তিনি নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। এর আগে ‘কালরাত্রি’ ওয়েব সিরিজেও তার অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল।

কৌশানি মনে করেন,

“এখনকার ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নানা ধরনের গল্প বলা হচ্ছে, যেখানে সমাজের বাস্তব দিকগুলো ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। আমি ভাগ্যবান যে, আমি এমন চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি, যা শুধু বিনোদন নয়, সমাজের বাস্তব পরিস্থিতিকেও তুলে ধরে।”

শেষ কথা

কৌশানির এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার যেকোনো মানুষের জীবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে। কিন্তু সাহস, সচেতনতা এবং বন্ধুদের সহযোগিতা থাকলে সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।

তিনি চান, তার মতো কেউ যেন আর এমন অভিজ্ঞতার শিকার না হন এবং যদি হন, তাহলে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করতে শিখুন। কারণ চুপ থাকা মানেই অন্যায়ের সামনে আত্মসমর্পণ করা, আর প্রতিবাদই বাঁচার একমাত্র উপায়!

ট্রাম্পের ‘পাল্টা শুল্ক’ ঘোষণার অপেক্ষায় বিশ্ব, ভারতের চিন্তা বাড়ছে!

Read more

Local News