মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন ডাক্তারি পড়ুয়া
গুজরাতের পাটন জেলার ধরপুরে অবস্থিত জিএমইআরএস মেডিক্যাল কলেজে র্যাগিংয়ের জেরে এক তরুণ ডাক্তারি ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। ১৮ বছর বয়সী অনিল নটবরভাই মেথানিয়া, যিনি সম্প্রতি কলেজটিতে ভর্তি হয়েছিলেন, শনিবার রাতে র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে তিন ঘণ্টা ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
কী ঘটেছিল?
অভিযোগ অনুযায়ী, কলেজের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্র শনিবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে প্রথম বর্ষের ১০ জনের বেশি ছাত্রকে ডেকে পাঠায়। প্রত্যেককে তিন ঘণ্টা ধরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এবং নিজের পরিচয় দিতে বাধ্য করা হয়। এই অত্যাচারের ফলে অনিল মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যান এবং সংজ্ঞা হারান। সহপাঠীরা তাঁকে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিবার ও সহপাঠীদের অভিযোগ
অনিলের পরিবারের দাবি, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়; বরং এটি র্যাগিংয়ের নিষ্ঠুর পরিণাম। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনিলের এক সহপাঠী জানান, ‘‘সিনিয়ররা আমাদের উপর শারীরিক এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছিল। তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করার পর আমাদের পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। অনিল সেই সময়েই ভেঙে পড়ে।’’
প্রশাসনিক পদক্ষেপ
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ ইতিমধ্যেই কলেজের অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির কাছে রিপোর্ট চেয়েছে। পাটনের পুলিশ সুপার রবীন্দ্র পটেল জানিয়েছেন, অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে এবং রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কলেজের ডিন হার্দিক শাহ জানিয়েছেন, ‘‘অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি এই ঘটনা তদন্ত করছে। যদি কারও বিরুদ্ধে র্যাগিংয়ের অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।’’
র্যাগিং বিরোধী নীতি ও বাস্তবতা
ভারতে র্যাগিং একটি অপরাধ এবং এটি বন্ধ করতে কেন্দ্রীয়ভাবে কঠোর আইন চালু রয়েছে। তবুও, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে র্যাগিংয়ের অভিযোগ মাঝেমধ্যেই সামনে আসে। গুজরাতের এই ঘটনার পর আরও একবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে র্যাগিং রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা
এই মৃত্যুর ঘটনা শুধু অনিলের পরিবারকেই শোকস্তব্ধ করেনি, বরং সারা দেশের মানুষকে স্তম্ভিত করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আচরণের কোনো জায়গা নেই। র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ আরও জোরদার করা এবং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন।

