চার রাজ্যে ভূমিকম্প!
মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে কেঁপে উঠল দেশের চার প্রান্ত— দিল্লি, বিহার, ওড়িশার পুরী এবং সিকিমের লাচুং। একের পর এক ভূমিকম্পের ঘটনায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটের সক্রিয়তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
দিল্লি শুরু, তারপর বিহার— কীভাবে একে একে কাঁপল দেশ?
সোমবার ভোর ৫টা ৩৬ মিনিটে প্রথম কম্পন অনুভূত হয় রাজধানী দিল্লি এবং সংলগ্ন এলাকায়। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.০। তবে বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কম্পন আরও তীব্র মনে হয়েছে। কারণ, ভূমিকম্পের উৎস ছিল মাত্র ৫ কিলোমিটার গভীরে। যখন ভূমিকম্পের উৎস এতটা অগভীর হয়, তখন কম্পনের প্রভাব বেশি অনুভূত হয় এবং কখনও কখনও মাটির নিচ থেকে গর্জনের মতো আওয়াজও শোনা যেতে পারে।
এর কিছুক্ষণ পর, সকাল ৮টা ২ মিনিটে, ভূমিকম্পের দ্বিতীয় ধাক্কা আসে বিহারের সিওয়ান জেলায়। কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৩ এবং এর উৎসস্থল ছিল ১০ কিলোমিটার গভীরে। বিহারের বিভিন্ন জায়গায় লোকজন আতঙ্কে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
সকাল গড়াতে না গড়াতেই, ওড়িশার পুরী জেলা এবং সিকিমের লাচুং-এ অনুভূত হয় আরও দুটি ভূমিকম্প। ওড়িশায় কম্পনের মাত্রা ছিল ৪.৭ রিখটার স্কেলে। যদিও এখনও পর্যন্ত সেখানে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পের কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?
দেশের এত জায়গায় একসঙ্গে ভূমিকম্প হওয়া নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় ভূখণ্ড একটি টেকটোনিক প্লেটের ওপর অবস্থিত, যা ধীরে ধীরে ইউরেশীয় প্লেটের দিকে ধাক্কা দিচ্ছে। এর ফলে ভারতবর্ষের উত্তর-পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিম অংশ সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজির (NCS) মতে, দিল্লি-হরিয়ানার ভূমিকম্প প্রধানত হিমালয়ের ভূমিকম্পীয় অঞ্চল এবং অরবল্লি-দিল্লি ফল্ট লাইন (fault line) সংলগ্ন হওয়ার কারণে হয়ে থাকে। অন্যদিকে, বিহার, ওড়িশা এবং সিকিমেও সক্রিয় ভূমিকম্পীয় অঞ্চল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর সতর্কতা ও জনগণের আতঙ্ক
ভূমিকম্পের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী টুইট করে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি লেখেন, “দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। অনুরোধ, শান্ত থাকুন এবং সতর্ক থাকুন। ভূমিকম্প-পরবর্তী কম্পন (Aftershock) হতে পারে।”
সাধারণ মানুষও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছেন, ভূমিকম্পের সময় কীভাবে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল এবং তাঁরা আতঙ্কে বাইরে ছুটে এসেছিলেন।
ভূমিকম্পের সময় কী করবেন?
✅ ঘরের ভিতরে থাকলে:
- শক্ত কোনো টেবিল বা ফার্নিচারের নিচে আশ্রয় নিন।
- জানালা, আয়না, দেয়ালের তাক, ফ্যানের কাছ থেকে দূরে থাকুন।
✅ বাইরে থাকলে:
- বিল্ডিং, গাছপালা এবং বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকুন।
- রাস্তার মাঝখানে থাকুন, যেখানে কিছুই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা নেই।
✅ বহুতলে থাকলে:
- লিফট ব্যবহার করবেন না।
- জরুরি নির্গমন পথের দিকে এগিয়ে যান।
মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?