Sunday, November 30, 2025

তিক্ততা থেকে ফের বন্ধুত্ব—হৃতিক–সুজ়ানের ভাঙাচোরা সম্পর্কে কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি?

Share

হৃতিক–সুজ়ানের ভাঙাচোরা সম্পর্কে কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি?

প্রায় চৌদ্দ বছরের বিবাহিত পথচলার পরে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন বলিউড তারকা হৃতিক রোশন এবং সুজ়ান খান। দুই ছেলের বাবা–মা হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের সম্পর্কের ফাটল এমন জায়গায় পৌঁছেছিল যে, বিচ্ছেদের সময় সুজ়ান নাকি প্রায় ৪০০ কোটি টাকার খোরপোশ দাবি করেছিলেন। সেই সময় দুই পরিবারই বিপদের মুখে পড়েছিল, আর হৃতিক–সুজ়ানের সম্পর্কে তিক্ততা তুঙ্গে উঠেছিল। অথচ আজ সেই সম্পর্কেই ঝরে পড়ে এক অদ্ভুত উষ্ণতা, বন্ধুত্বের সহজ মেলবন্ধন। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পর কী ভাবে ফের মিলল সম্পর্কের সুর? কার হাত ধরে কাটল সেই তিক্ততা?

৭ নভেম্বর, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে প্রয়াত হলেন সুজ়ানের মা জ়রীন খান। দীর্ঘ দিন ধরেই নানা বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর প্রয়াণের পরে দেখা গেল অন্য এক দৃশ্য—সুজ়ান ভেঙে পড়ছেন কান্নায়, আর একই সঙ্গে শোকাহত হয়ে পড়েছেন হৃতিকের মা পিঙ্কি রোশনও। শুধু নাতিদের দিদিমা হিসেবেই নয়, জ়রীন ছিলেন তাঁর নিকটতম বন্ধুদের একজন। এই সম্পর্কই আসলে বুঝিয়ে দেয়, দুই পরিবারের বন্ধন ভাঙা এত সহজ ছিল না।

পিঙ্কি রোশন পরে একটি পোস্টে জানান, তাঁদের ছেলেমেয়েরা যখন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল, সেই দিনটি তাঁর এবং জ়রীনের জীবনে ছিল অসম্ভব আনন্দের। আবার যখন তাঁদের সন্তানদের দাম্পত্য ভেঙে গিয়েছে, তখনও তাঁরা পরস্পরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন, চোখের জল মুছে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি আরও লিখেছেন—“আমাদের ছেলেমেয়েরা যখন জীবনের কঠিন সময় পার করেছে, আমরা তখন ঘৃণার বদলে সহমর্মিতা বেছে নিয়েছিলাম। সম্পর্ক যে কোনও সময় বিষিয়ে যেতে পারত, কিন্তু জ়রীন তা হতে দেননি। তিনি ভালবাসার ভাষা বুঝতেন, এবং সেই ভাষাতেই সমস্যার সমাধান খুঁজতেন।”

এক সময় পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, হৃতিক–সুজ়ানের মধ্যে স্বাভাবিক কথা বলা পর্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। দু’জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বেড়ে গিয়েছিল, সম্পর্ক হয়ে উঠেছিল তিক্ত ও দূরত্বে ভরা। কিন্তু জ়রীন কখনও চাননি তাঁর মেয়ে এবং প্রাক্তন জামাই পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করুন। তিনি সব সময়ই নরম সুরে বুঝিয়ে বলেছেন—বিবাহ ভেঙে গেলেও অভিভাবকত্বের সম্পর্ক, মানুষের প্রতি মানুষের সহমর্মিতা ভাঙে না। বাচ্চাদের স্বার্থে হৃতিক ও সুজ়ান যাতে সুসম্পর্ক বজায় রাখেন, সে দিকটিও তিনি নজরে রেখেছিলেন।

জ়রীন খানের এই মানসিকতা এবং পরিণত আচরণই ধীরে ধীরে পুরনো তিক্ততার বরফ গলিয়ে দিয়েছে। আলাদা পথে হাঁটলেও দু’জনেই এখন প্রায়শই সন্তানের নানা উপলক্ষ্যে একসঙ্গে দেখা দেন, উৎসবে পাশে দাঁড়ান। তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক এখন বন্ধুত্বের, পরস্পরের প্রতি সম্মানপূর্ণ।

আজ জ়রীনের প্রয়াণে পিঙ্কি রোশনের কণ্ঠেও তাই উঠে এসেছে গভীর কৃতজ্ঞতা—“জ়রীন এমন মানুষ ছিলেন, যাঁর কাছাকাছি গেলেই মনে হত জীবন সহজ, সব সমস্যা সামলে নেওয়া যায়। এখনকার দিনে লোকে মানসিক পরামর্শের খোঁজে থেরাপিস্টের কাছে যায়। অথচ জ়রীনের মতো একটা মানুষকে চেনা থাকলেই জীবনের পথ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যেত।”

সত্যিই, সিনেমার ঝলক নয়—মানুষের সম্পর্ককে মেরামত করে কখনও কখনও এক নীরব, গভীর মমতা। হৃতিক–সুজ়ানের সম্পর্কের এই দ্বিতীয় অধ্যায় সেই উষ্ণতারই নিদর্শন, আর তার কেন্দ্রে নির্ঘাতই ছিলেন জ়রীন খান।

Read more

Local News