মহেশ বাবুর ‘চিরসবুজ’ দেহের পেছনের গোপন মন্ত্র ফাঁস!
বয়স পঞ্চাশ পেরোলেও তাঁকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই—এমন মন্তব্য আজ আর কারও কাছে নতুন নয়। দক্ষিণী সুপারস্টার মহেশ বাবু যত দিন এগোচ্ছেন, ততই যেন বয়সকে পিছনে ফেলে তরুণের মতো চেহারা নিয়ে পর্দায় হাজির হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে এসএস রাজামৌলির ছবি ‘বারাণসী’-র প্রচারে রুদ্র চরিত্রের প্রথম ঝলক প্রকাশ্যে আসতেই দর্শকের চোখ কেড়ে নিয়েছে তাঁর মেদহীন, টোনড, সুগঠিত দেহ। ৩০-এর যুবকের সঙ্গে তাঁর তুলনা টানছেন বহু দর্শক-সমালোচক। প্রশ্ন একটাই—৫০ বছর বয়সেও এমন তারুণ্য ধরে রাখার রহস্য কী?
এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন মহেশ বাবুর ব্যক্তিগত ফিটনেস প্রশিক্ষক কুমার মান্নভা। তাঁর কথায়, “মহেশ বাবু নিছক কোনও চরিত্রের জন্য নয়, সারা বছরই নিজের শরীরের উপর কঠোর নজর রাখেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শৃঙ্খলার মাত্রাই যেন বেড়েছে।”
নিয়মিত ব্যায়ামই তাঁর মূল অস্ত্র
তারকা হয়েও অনিয়ম মহেশের অভিধানে নেই। সপ্তাহে পাঁচ দিন তিনি নিয়ম করে অন্তত এক থেকে দেড় ঘণ্টা শরীরচর্চা করেন। এই ব্যায়ামের তালিকায় থাকে স্ট্রেচিং, স্কোয়াট এবং কার্ডিয়ো—যা তাঁর শরীরকে একই সঙ্গে চনমনে এবং পেশিবহুল রাখতে সাহায্য করে। প্রশিক্ষকের দাবি, “স্ট্রেচিং হল তাঁর অন্যতম প্রিয় ব্যায়াম। বয়স বাড়তে থাকলে শরীরকে ফ্লেক্সিবল রাখা জরুরি—এ ব্যাপারে মহেশ বাবুকে নিখুঁত উদাহরণ বলা যায়।”
চিত্রায়ণ বা প্রচারের চাপ যতই থাকুক, ব্যায়াম বাদ পড়ে না। শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততার দিনেও তিনি জিমে অন্তত ৪৫ মিনিট সময় বের করে নেন।
সারা বছরের খাদ্যনিয়ম—তারুণ্যের ভিত
মহেশ বাবুর ফিটনেসের ‘গোপন চাবিকাঠি’ তাঁর নিখুঁত খাদ্যাভ্যাস। চর্বিযুক্ত বা ভাজাভুজি তিনি স্পর্শও করেন না। প্রোটিন, সুষম কার্বোহাইড্রেট এবং হেলদি ফ্যাট—এ তিনের উপরই দাঁড়িয়ে তাঁর রোজকার খাবার।
তিনি দিনে পাঁচ থেকে ছ’বার খান, অল্প অল্প পরিমাণে। এর ফলে শরীরে শক্তি থাকে, কিন্তু মেদ জমে না। দু’বার তিনি নেন প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট শেক। খাদ্য নিয়ে কোনও পরীক্ষানিরীক্ষা নয়—নিয়মই তাঁর একমাত্র জাদু।
সকালের খাবার
ওটস, সেদ্ধ ডিম, বিভিন্ন মরসুমি ফল এবং কিছু শুকনো ফল। দিন শুরু হয় এই ‘ক্লিন ফুড’ দিয়েই।
দুপুরের মেনু
ব্রাউন রাইস, সঙ্গে মাছ বা মাংসের ঝোল। প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের নিখুঁত মিশ্রণ নিয়ে তিনি দুপুরের খাবার খান।
রাতের খাবারে হালকা পদ
রাতেও একই নিয়ম—অতিরিক্ত তেল-মশলা নেই। ব্রাউন ব্রেড, চিকেন স্টু, কিংবা সেদ্ধ ডিম—হালকা এবং পুষ্টিকর খাদ্যই থাকে তাঁর পাতে।
মানসিক শৃঙ্খলাই শেষ কথা
ফিটনেস প্রশিক্ষকের মতে, মহেশ বাবুর তারুণ্য ধরে রাখার সবচেয়ে বড় রহস্য তাঁর মনোভাব। তিনি কখনও নিজেকে বয়সের অজুহাত দেন না। নিখুঁত ঘুম, জলপান, স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ—এসবই তাঁর রোজকার অভ্যাসের অংশ। শুটিং, প্রচার বা দীর্ঘ সফরেও তিনি নিজের শৃঙ্খলা ভাঙতে দেন না।
কুমারের কথায়, “৫০-এও মহেশ যেভাবে নিজের শরীর বজায় রেখেছেন, তা একমাত্র মানসিক শক্তি এবং নিষ্ঠার ফল।”
তারকাদের কাছে যেখানে বয়স শুধু সংখ্যা
মহেশ বাবুর উদাহরণ আজ বহু তরুণ-তরুণীর অনুপ্রেরণা। তাঁর প্রমাণ, বয়স যাই হোক—নিয়ম মানলে শরীর একই রকম তারুণ্য ধরে রাখতে পারে। পর্দায় রুদ্রের মতো চরিত্রে তাঁর লুক যতটা নজর কেড়েছে, এই ফিটনেস রুটিনও ততটাই আলোচিত হয়ে উঠেছে।
পঞ্চাশেও যুবক—এ শুধু প্রশংসা নয়, কঠোর যত্নের বহু বছরের ফল।

