তাইল্যান্ডে কম খরচে ভ্রমণের
তাইল্যান্ডে বেড়াতে যাওয়ার স্বপ্ন অনেকেরই রয়েছে, তবে খরচের ভয় অনেককে তা করতে দেয় না। কিন্তু ঠিকঠাক পরিকল্পনা করে এবং কিছু কৌশল অনুসরণ করে, আপনি আপনার বাজেটের মধ্যে থেকেও এই জনপ্রিয় গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারেন। তাইল্যান্ডের সুন্দর সৈকত, নীল জল, বৌদ্ধ মন্দির এবং এক্সট্রাভ্যাগেন্ট শহরগুলো ভ্রমণ করতে অর্থের কষ্টের দরকার নেই। এখানে কিছু সহজ টিপস রয়েছে, যা আপনাকে কম খরচে তাইল্যান্ড ঘুরে আসার উপায় দেখাবে।
১. ভিসা ফি থেকে সাশ্রয়
ভিসার খরচ কমানোর সুবিধা নিয়ে সম্প্রতি ট্যুরিজ়ম অথরিটি অফ তাইল্যান্ড (ট্যাট) ভারতীয়দের জন্য ভিসামুক্ত প্রবেশ নীতি বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে এখন ভারতের নাগরিকদের জন্য তাইল্যান্ডে যাওয়ার জন্য কোনো ভিসার খরচ প্রয়োজন নেই। এটি আপনার বাজেটের ওপর অনেক চাপ কমাতে পারে।
২. জায়গা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা
ভ্রমণ শুরু করার আগে, গন্তব্যস্থল সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা নেয়া জরুরি। কোথায় কীভাবে ঘুরবেন, কেমন পরিবহণ ব্যবস্থা আছে, কোথায় থাকার সুবিধা বেশি—এগুলো আগে থেকেই জেনে রাখলে খরচ বাঁচানো সম্ভব। ফুকেটের সৈকত, ব্যাংককের নাইটলাইফ বা পাটায়ার আনন্দ—আপনার আগ্রহের ভিত্তিতে পরিকল্পনা করুন।
৩. অফ সিজন বেছে নিন
প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রেই একটি নির্দিষ্ট মরসুম থাকে, যখন পর্যটকদের ভিড় বেশি। তবে খরচ কমাতে চাইলে আপনি ‘অফ সিজন’ বা পর্যটকদের কম আসা সময়ে সফর করুন। এই সময় হোটেল এবং খাবারের দাম অনেক কম থাকে। অধিকাংশ জনপ্রিয় স্থানে এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় কম থাকে, যা বাজেটের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলে।
৪. বিমানের টিকিটের সাশ্রয়ী উপায়
তাইল্যান্ডে যেতে হলে বিমানবন্দরই মূল ভরসা। তবে, পর্যটন মরসুমে অল্প সময় আগে টিকিট কাটলে খরচ অনেক বেড়ে যায়। সুতরাং, ৩ থেকে ৪ মাস আগে বিমান টিকিট বুক করা ভালো। অনেক বিমান সংস্থা সময় বিশেষে ছাড়ও দেয়, যা আপনার খরচ কমাতে সাহায্য করবে। কলকাতা থেকে ব্যাংকক যাওয়ার জন্য, টিকিটের খরচ সাধারণত ১৫-২০ হাজার টাকা হয়, তবে আগে বুকিং করলে এটি কমতে পারে।
৫. থাকার জন্য সাশ্রয়ী বিকল্প
তাইল্যান্ডে থাকার জন্য বেশ কিছু হস্টেল রয়েছে, যেখানে আপনি খুবই কম খরচে থাকবেন। বিশেষ করে ব্যাংকক, ফুকেট এবং পাটায়ায় এরকম হস্টেল পাওয়া যায়, যেগুলিতে সুইমিং পুল, ওয়াইফাই সহ অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যায়। এ ধরনের হস্টেলে মাথাপিছু ১৫০০-২৫০০ টাকা খরচ হতে পারে। আবার, স্থানীয় বাড়ি ভাড়া নিয়েও আপনি রান্না করে খাওয়া দাওয়া করতে পারেন, যা আরও সাশ্রয়ী হবে।
৬. খাবারের খরচ কমান
তাইল্যান্ডে গিয়ে যদি ভারতীয় বা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যান, তবে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। তবে, স্থানীয় খাবার খেলে খরচ কমানো সম্ভব। রাস্তা থেকে, খাবারের দোকান বা শপিং মলে খাবার কিনলে সাশ্রয়ী হবে। স্থানীয় থাই খাবার যেমন প্যাড থাই, টম ইয়াম স্যুপ ইত্যাদি বেশ সস্তা ও সুস্বাদু।
৭. গণপরিবহণ ব্যবহার করুন
তাইল্যান্ডের শহরগুলিতে গণপরিবহণের ব্যবস্থা অত্যন্ত সুবিধাজনক। ব্যাংকক, পাটায়া, ফুকেট—সব জায়গাতেই স্কাই ট্রেন এবং মেট্রোর মতো গণপরিবহণ ব্যবস্থা রয়েছে, যা খুবই কম খরচে আপনাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাবে। বিশেষত, স্কাই ট্রেন এবং এমআরটি সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি খুব সহজেই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছাতে পারবেন। এছাড়া, বাইক বা স্কুটার ভাড়ায় নিয়ে শহর ঘোরাও সাশ্রয়ী।
৮. ট্রেন এবং বাস ভ্রমণ
তাইল্যান্ডের মাঝে অনেক গন্তব্যে বাস এবং ট্রেনের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যেতে পারে। যেমন ব্যাংকক থেকে পাটায়া বা ফুকেট যাওয়ার জন্য বাস ব্যবহার করা বেশ সস্তা। ট্রেনের মাধ্যমে চিয়াংমাই বা চিয়াংরাই যাওয়ার সুযোগও রয়েছে। বাসের মাধ্যমে ট্রেনের চেয়ে অনেক কম খরচে পৌঁছানো সম্ভব।
৯. ভ্রমণের সময় নির্ধারণ
ভ্রমণের সময় আপনি যে কয়টি দিন ঘুরবেন, তার উপর খরচ নির্ভর করে। সাধারণত, ব্যাংকক, পাটায়া এবং ফুকেট ঘুরতে সাত দিন মতো সময় লাগে। তবে, আপনি চাইলে একটু কম সময়ের মধ্যে হলেও বাজেট মেনে ঘুরে আসতে পারেন। খরচের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনার ভ্রমণের সময় ঠিক করুন।
তাইল্যান্ডে ঘুরতে যাওয়ার জন্য বিশাল বাজেটের প্রয়োজন নেই। যদি আপনি উপরের কৌশলগুলি অনুসরণ করেন, তবে কম খরচে আনন্দদায়ক একটি ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন। পরিকল্পনার মাধ্যমে, আপনার স্বপ্ন পূরণ হতে পারে।