Monday, February 24, 2025

তন্ময়কে সাসপেন্ড করে সিপিএম ‘নকল বুঁদির গড়’ রক্ষা করতে পারবে?

Share

তন্ময়কে সাসপেন্ড

সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্যকে মহিলা সাংবাদিকের প্রতি হেনস্থার অভিযোগে তড়িঘড়ি সাসপেন্ড করা হয়েছে। এদিকে, আইনি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বরাহনগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই মহিলা সাংবাদিক, এবং সোমবার পুলিশ তন্ময়কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

পশ্চিমবঙ্গে সিপিএমের ভোটের সংখ্যা কমতে কমতে একসময়কার শাসকদলকে ‘হারাবংশী’ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এই প্রেক্ষাপটে তন্ময়ের সাসপেনশন সিপিএমের অভ্যন্তরে নতুন প্রশ্ন তোলেছে। তাদের ‘নকল বুঁদির গড়’ রক্ষা করার সক্ষমতা কি সত্যিই আছে?

পুরনো ঘটনা নতুন আলোচনায়

তন্ময়ের সাসপেনশনের পরে দলের অন্দরেও নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। সিপিএমের রক্তক্ষরণ যে অব্যাহত রয়েছে, তা একাধিক নির্বাচনে স্পষ্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এক ধরনের জনমত তৈরি হলেও সিপিএম তার রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সিপিএম হয়তো তীব্র সংকটে রয়েছে, তবে তাদের ইতিহাসের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। এই কারণেই তন্ময়কে দ্রুত সাসপেন্ড করা হয়েছে।

রবিবার মহিলা সাংবাদিকের অভিযোগে তন্ময়কে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাংবাদিক ফেসবুকে লাইভ এসে জানান, সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে তন্ময় তার কোলে বসে পড়েন। এর পরেই সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব তন্ময়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সন্ধ্যায় সাসপেনশনের ঘোষণা করেন।

কেন এত তৎপরতা?

সিপিএমের এই ‘তৎপরতা’র পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, তারা জনমানসে প্রমাণ করতে চায় যে, দলে অভিযুক্ত এবং দোষীর মধ্যে তারা ফারাক করে না। দ্বিতীয়ত, পেশাগত কাজের মধ্যে তরুণীর হেনস্থার ঘটনা আলোচনায় আসায় সিপিএম বাড়তি গুরুত্ব দিতে চেয়েছে। তৃতীয়ত, সিপিএমের নেতা-কর্মীরা সমাজমাধ্যমে সরব হয়ে ওঠায় তন্ময়কে সাসপেন্ড করা ছাড়া উপায় ছিল না।

তন্ময়ের সাসপেনশন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। দলের ‘ইন্টারনাল কমপ্লেন কমিটি’ (আইসিসি) ঘটনার তদন্ত করবে এবং রিপোর্ট জমা দেবে। সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, সাসপেনশন একটি শাস্তি। কিন্তু, দলের মধ্যে অনেকে মনে করছেন, পিডিজি ভবন বা ক্যাল ডিসি এমন দৃঢ়তা দেখাতে পারেনি।

গতানুগতিকতার দোষ

দু বছর আগে দক্ষিণ কলকাতার এক যুবনেতার বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল। যদিও সিপিএম তদন্ত করেছিল, কিন্তু তন্ময়ের ক্ষেত্রে দল দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারলেও সেই যুবনেতার ক্ষেত্রে কঠোর হয়নি। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে গুঞ্জন রয়েছে।

বারাসতেও তন্ময়ের মতো এক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, কিন্তু দল সেখানে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এদিকে, সিপিএমের নেতাদের অনেকেই মেনে নিচ্ছেন যে, তারা তন্ময়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও রাজ্য কমিটির ক্ষেত্রে কঠোরতার অভাব ছিল।

সম্মেলন এবং ভবিষ্যৎ

সিপিএমের ভোট কমছে, কিন্তু বহু লোক এখনও দলীয় পদে থাকার ‘মোহ’ ধরে রেখেছে। দলে সম্মেলন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তন্ময়ের বিরুদ্ধে ‘অভিসন্ধি’ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তন্ময়ও তার ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, তাঁকে সম্মেলনের আগে ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। ফলে, সিপিএমের এই তৎপরতা কি সত্যিই তাদের ‘নকল বুঁদির গড়’ রক্ষা করতে সক্ষম হবে? ভবিষ্যতে কি এই ধরনের ঘটনা কমানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।

Read more

Local News