পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্নের মুখে বিকাশ ভবনের বিক্ষোভ!
বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভ ও উত্তেজনার ছবি অনেককেই মনে করিয়ে দিল কসবার সাম্প্রতিক ঘটনার কথা। প্রশ্ন একটাই—পুলিশ কি আগাম তথ্য পেয়েও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হল?
বেকার শিক্ষকদের আন্দোলন ঘিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিকাশ ভবন চত্বর। চোখের সামনে পুলিশের নীরবতা দেখে অনেকেই বলছেন, এত বড় জমায়েত নিয়ে কি পুলিশ একেবারেই প্রস্তুত ছিল না? যদিও পুলিশের একাংশ দাবি করেছে, তাদের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিল, কিন্তু সেই তথ্যের গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
পরদিন ভবানী ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, পুলিশ সংযত ছিল এবং পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি ছিল। বিধাননগর পুলিশের বক্তব্য, প্রায় তিন থেকে চারশো পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মূল গেটের সামনে কিছু গার্ডরেল ছাড়া বিশেষ কোনও নিরাপত্তা দেখা যায়নি। পিছনের গেট ছিল প্রায় অরক্ষিত, সেখান থেকেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা।
প্রাক্তন পুলিশকর্তা সলিল ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, “যদি সত্যিই ইন্টেলিজেন্স ইনপুট থাকত, তবে কেন একাধিক ধাপে ব্যারিকেড করা হল না? কেন গেট ভেঙে পড়ার পরও পুলিশ বাড়ানো হল না?” তাঁর অভিযোগ, পুলিশ হয়তো ইচ্ছে করেই চুপ থেকেছে, পরে ‘শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করে।
আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাঁদানে গ্যাস বা জলকামান ব্যবহার করা যায়। কাঁদানে গ্যাস রাতে ব্যবহার না করলেও, জলকামান কেন ব্যবহার করা হল না? লাঠি দিয়ে এ ভাবে বলপ্রয়োগ কতটা যুক্তিসংগত?”
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা সরকারি চাকরির দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। তা হলে প্রথম সারির পুলিশ অফিসাররা কেন সামনে এলেন না? কেন দায় চাপানো হল নিচুতলার পুলিশকর্মীদের ওপর?
আইনজীবী দেবকুমার চন্দ্রের বক্তব্য, “স্পেশাল ব্রাঞ্চের মাধ্যমে পুলিশ আগাম তথ্য পেয়ে থাকে। তবুও যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে বুঝতে হবে—এটা পরিকল্পিত অবহেলা।”
তিনি আরও বলেন, “নেতাদের গাড়ি আটকে গেলে স্থানীয় লোকজন এনে রাস্তা খালি করা হয় না। সেখানে তো পুলিশের দায়িত্বই ছিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়া। তাহলে পুলিশ চুপ করে থাকল কেন?”
এই ঘটনার পর অনেকেই মনে করছেন, পুলিশের ভূমিকা শুধু প্রশ্নবিদ্ধ নয়, বরং পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। এমনকি বছর দুয়েক আগে টেট আন্দোলনের সময় অরুণিমা পালকে কামড়ে দেওয়ার অভিযোগও নতুন করে উঠে এসেছে আলোচনায়। সে সময় অরুণিমাকে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হলেও আদালত তাকে দ্রুত জামিন দেয়।
সারা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে একের পর এক—পুলিশ কি সঠিক প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না? নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে বলপ্রয়োগের পথ বেছে নিচ্ছে? সবচেয়ে বড় কথা, যদি তথ্য ছিলই, তবে এত বড় উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেল কীভাবে?
উত্তর এখনো অধরা। আর সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা, খুঁজে চলেছেন ন্যায়বিচার।
জেনিভার নিলামে ঝলসে উঠল ‘মেডিটেরেনিয়ান ব্লু’, ১০ ক্যারাটের হিরের দাম ১৮৪ কোটি!

