Monday, December 1, 2025

ঢাকায় জাতীয় পার্টির দফতরে অগ্নিসংযোগ, অভিযোগ গণ অধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে

Share

অভিযোগ গণ অধিকার পরিষদের বিরুদ্ধে

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের উত্তেজনা। রাজধানী ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির (জাপা) সদর দফতরে শুক্রবার রাতে ঘটে গেল ভয়াবহ ঘটনা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ আর সংঘর্ষে থমথমে হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। এক সময়ের শাসকদল জাপার অভিযোগ, এই হামলার নেপথ্যে রয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে উঠে আসা রাজনৈতিক সংগঠন গণ অধিকার পরিষদ। তাঁদের দাবি, মিছিল করে আসা পরিষদের সমর্থকেরা দফতরে হামলা চালায়। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়, যা আরও উত্তেজনা বাড়ায়।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হুসেন মহম্মদ এরশাদ প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি গত দেড় দশক ধরে জাতীয় সংসদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজনীতির মূল স্রোতে ছিল। তবে গত বছরের ৫ অগস্ট জনবিক্ষোভের চাপে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পরিস্থিতি আমূল বদলে যায়। আওয়ামী লীগের সদর দফতরের পাশাপাশি এরশাদের দলের কার্যালয়ও আন্দোলনকারীদের রোষের মুখে পড়ে। বর্তমানে জাপার নেতৃত্বে রয়েছেন এরশাদের ভাই জিএম কাদের।

এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রতিশোধের ছায়া দেখছে জাপা। দলের নেতাদের অভিযোগ, গত সপ্তাহে দু’দলের কর্মীদের সংঘর্ষে পুলিশের লাঠির আঘাতে গণ অধিকার পরিষদের অন্যতম নেতা নুরুল হক নুর আহত হন। সেই ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই শুক্রবার রাতে এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে গণ অধিকার পরিষদের নেতারা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই।

এদিকে, বাংলাদেশের নবগঠিত নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লা, যিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবেও পরিচিত, তিনি বারবার জাতীয় পার্টিকে ‘জাতীয় বেইমান’ বলে আক্রমণ করেছেন। এর ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধ আরও তীব্র হয়েছে। অনেকের মতে, এই ঘটনার নেপথ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ আর অভিযোগ-প্রত্যাঘাতই কাজ করছে।

হামলার খবর ছড়াতেই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়। সাধারণ মানুষ ভয়ে আশপাশের এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরা জানান, হঠাৎ করেই কয়েকশো মানুষ মিছিল করে এসে জাতীয় পার্টির দফতরে হামলা চালায়। আগুনে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং আসবাব নষ্ট হয়ে যায় বলে জানিয়েছে জাপার নেতারা।

রাজনৈতিক মহলে এখন প্রশ্ন উঠছে, এই ঘটনার ফলে আসন্ন সময়ের রাজনৈতিক সমীকরণ কোন পথে যাবে। কারণ, এরশাদের দল বহুদিন ধরেই ক্ষমতার রাজনীতিতে ভারসাম্যের ভূমিকা পালন করেছে। অন্যদিকে, গণ অধিকার পরিষদ নতুন হলেও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসে দ্রুতই জনসমর্থন অর্জন করেছে। দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব যদি আরও বাড়ে, তবে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

এখন দেখার বিষয়, তদন্তে কী বেরিয়ে আসে এবং সরকার কী পদক্ষেপ নেয়। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট— জাতীয় পার্টির দফতরে এই হামলা শুধু একটি রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়, বরং বাংলাদেশের অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেরই প্রতিচ্ছবি।

ওড়িশায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে ইডির তল্লাশি, ১৩৯৬ কোটির প্রতারণা মামলায় উদ্ধার কোটি টাকার সম্পদ

Read more

Local News