ড্রাগনের ঋণের জালে ‘সুপার পাওয়ার’!
বছরের পর বছর ছোট ও দুর্বল অর্থনীতির দেশগুলিকে ঋণের ফাঁদে ফেলে কূটনৈতিক প্রভাব বাড়িয়েছে চিন। আফ্রিকা, এশিয়া, লাতিন আমেরিকার বহু দেশ সেই ঋণের জালে পড়ে ভূমি ও নীতিনির্ধারণে বেজিংয়ের চাপ মেনে চলতে বাধ্য হয়েছে। সেই ‘ডেট-ট্র্যাপ ডিপ্লোমেসি’ নিয়ে বারবার সারা বিশ্বকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এ বার সেই ‘জ্ঞানপাপী’ দেশটিই নাকি জড়িয়ে পড়েছে একই জালে! ভার্জিনিয়ার উইলিয়াম অ্যান্ড মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘এইডডেটা’–র বিস্ফোরক রিপোর্টে এই চাঞ্চল্যকর দাবি উঠে এসেছে।
■ আমেরিকাই নাকি চিনের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা!
এইডডেটার রিপোর্ট বলছে—
২০ হাজার কোটি ডলার বা তারও বেশি ঋণ নিয়েছে আমেরিকার বিভিন্ন সংস্থা।
বেজিংয়ের অর্থানুকূল্যে চলছে প্রায় আড়াই হাজার প্রকল্প।
ডেটাসেন্টার থেকে বিমানবন্দর, প্রযুক্তির পরিকাঠামো থেকে বাণিজ্যিক উন্নয়ন— মার্কিন মাটিতে কৌশলগত খাতে কোটি কোটি ডলার ঢালছে চিনা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি। এই ঋণের বড় অংশই এসেছে কেম্যান দ্বীপপুঞ্জ ও বারমুডার ‘শেল কোম্পানি’র মাধ্যমে, যাদের আসলে কোনও বাস্তব অস্তিত্বই নেই।
এইডডেটার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ব্র্যাড পার্কস সরাসরি বলেছেন—
“ওয়াশিংটন অন্যদের চিনের ঋণ নিতে বারণ করছে, অথচ নিজেরাই বিপুল ঋণ নিয়ে বসে আছে। এটা একেবারে স্পষ্ট দ্বিচারিতা। জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বিপজ্জনক।”
■ কোভিড-পর্বেই শুরু! ধস নামা মার্কিন অর্থনীতিতে ঢালাই শুরু ড্রাগনের টাকা
২০২০-২১ অর্থবর্ষ থেকে মার্কিন বাজারে দ্রুত বাড়তে থাকে চিনা ঋণের পরিমাণ।
কোভিডে বিপর্যস্ত আমেরিকার অর্থনীতির সুযোগ নিয়ে বেজিং আকছার জ্বালানি, মহাকাশ গবেষণা, সেমিকন্ডাক্টর— এমন সব স্ট্র্যাটেজিক সেক্টরে বিনিয়োগ বাড়ায়।
২০২৩ সালের মধ্যেই চিন বিশ্বের বৃহত্তম ঋণদাতা হয়ে ওঠে—
বিশ্বব্যাঙ্ক, আইএমএফ, এমনকি জি-৭ দেশের উন্নয়নব্যাঙ্কগুলিকেও ছাপিয়ে।
■ মার্কিন বন্ডেও ড্রাগনের দখল— দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণদাতা চিনই
২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত মার্কিন ট্রেজারি সিকিউরিটির
৭৭ হাজার কোটি ডলার কিনেছে চিন।
জাপানের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম মার্কিন বন্ডহোল্ডার হচ্ছে বেজিং।
এই বন্ড কেনার অর্থ— আমেরিকা সরাসরি চিনের কাছে আরও ঋণী হয়ে ওঠা।
■ মার্কিন অর্থনীতি ‘খাদের কিনারায়’: আইএমএফ-এর সতর্কবার্তা
আইএমএফের তীব্র সতর্কবাণী—
গত ১০০ বছরে প্রথম বার আমেরিকার জাতীয় ঋণ ইটালি ও গ্রিসকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
২০২৪ সালে মার্কিন ঋণ জিডিপির ১২৩% হলেও
২০৩৫ সালে তা ১৪৩%-এ পৌঁছতে পারে— এমনটাই পূর্বাভাস।
ইতিমধ্যেই আমেরিকার জাতীয় ঋণ ছাড়িয়েছে
৩৮ লক্ষ কোটি ডলার।
বিশ্লেষকদের মতে—
- অতি-মাত্রায় প্রতিরক্ষা খরচ
- মহাকাশ গবেষণায় বিপুল ব্যয়
- রাজস্ব আদায়ের অক্ষমতা
- সুদের অঙ্কের লাগাতার বৃদ্ধি
এই সব কারণেই আমেরিকা মূল ঋণ শোধ করতে পারছে না
— শুধু সুদই গুনে চলেছে।
■ দুই কাঁটার ধাক্কা: জাতীয় ঋণ ও চিনের ফাঁদ— বিপদে মার্কিন ভবিষ্যৎ
অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন—
মার্কিন অর্থনীতি আগামী দশকে দুই চাপের নিচে দম ফেলতে পারবে না:
- রেকর্ড জাতীয় ঋণ
- চিনের ঋণ-ফাঁদ
এর ফলে প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ গবেষণার বহু গোপন প্রযুক্তি
চিনের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
ইতিমধ্যেই ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বেজিংয়ের উপর।
অর্থনীতিতেও একই ছবি দেখা দিলে
সুপার পাওয়ার তকমা হারাতেও পারে আমেরিকা— এমনটাই সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞদের।

