ডেকার্স লেন
কলকাতার ডেকার্স লেন একসময় কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম কেন্দ্রস্থল ছিল। যেখানে বিপ্লবের নীল নকশা আঁকা হয়েছিল, আজ সেখানে ইসকনের ফ্লেক্স ঝুলছে, আর কমিউনিস্ট পার্টির কোনো চিহ্নমাত্র নেই! সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস হারিয়ে গেছে জনসাধারণের স্মৃতি থেকে।
বিপ্লবের কেন্দ্র থেকে ‘অজানা’ ঠিকানা
ডেকার্স লেনের চারতলা বাড়ির নিচে বসে থাকা বৃদ্ধ নিরাপত্তারক্ষী মদন নাথকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আলিমুদ্দিন স্ট্রিট চিনি, তবে ডেকার্স লেনে কমিউনিস্ট পার্টির অফিস ছিল, তা জানি না।’’ একই উত্তর আশপাশের দোকানদারদের থেকেও। অথচ, ৭৭ বছর আগে এখানেই ছিল অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির সদর দফতর।
আজ সেখানে ইসকনের দখল। বাড়ির সামনে বড়সড় ফ্লেক্স ঝুলছে— ‘‘আপনি সিসিটিভির নজরদারিতে আছেন।’’ কিন্তু, সেই বাড়ির ইতিহাস এখন বিস্মৃতপ্রায়। যে জমিতে এককালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেখানে আজ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।
কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ও রাজ্য সম্মেলন
১৯৪৮ সালে এই ঠিকানায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির চতুর্থ রাজ্য সম্মেলন হয়েছিল। তখন কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু বিপ্লবের আগুন ছিল উজ্জ্বল। সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন রণেন সেন। স্বাধীনতার পরেও এখানে চলেছিল গোপন কার্যকলাপ।
এখন, যখন সিপিএম ২৭তম রাজ্য সম্মেলনের পথে, তখন দলের ইতিহাস ঘেঁটে নতুন বার্তা দিতে চাইছে নেতৃত্ব। সেই প্রেক্ষাপটেই প্রচার করা হচ্ছে ‘পুরানো সেই দিনের কথা’। কিন্তু, বাস্তবে সেই পুরনো ইতিহাসের সাক্ষীস্থান আজ অন্য রূপ নিয়েছে।
ইসকনের দখলে বিপ্লবের স্মৃতিচিহ্ন
ডেকার্স লেনের একাংশ এখন ইসকনের হাতে। তবে, ইসকন কলকাতার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাধারমণ দাস জানান, ‘‘এই সম্পত্তি আমাদের দান করা হয়েছিল কি না, তা আমি জানি না।’’ নিরাপত্তারক্ষী ও আশপাশের মানুষজন জানালেও, ইসকনের পক্ষ থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।
স্থানীয় দোকানদারদের মতে, আগে মাঝেমধ্যে ইসকনের সন্ন্যাসীরা এখানে আসতেন, তবে এখন আর তেমন দেখা যায় না। বাড়িটি দীর্ঘদিন ব্যবহৃত হয়নি, এটি দেখেই বোঝা যায়।
হারিয়ে যাওয়া বিপ্লবের ইতিহাস
ডেকার্স লেন এখন মূলত কলকাতার ‘খাদ্য গলি’ নামে পরিচিত। এখানে সারাদিন খাবার-দাবারের ভিড় লেগে থাকে, কিন্তু কেউ জানেন না যে, এই জায়গাটিই একসময় কমিউনিস্ট পার্টির গোপন কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম জানান, ‘‘তখন পার্টির অফিস ঠিকানা বদলে বদলে থাকত। তাই বর্তমান প্রজন্ম জানে না, কোথায় আমাদের ইতিহাস লুকিয়ে আছে।’’
কমিউনিস্টদের দুর্দিন ও ভবিষ্যৎ
সত্তরের দশকে সংসদীয় গণতন্ত্রে বড় প্রভাব ফেলেছিল কমিউনিস্টরা। ১৯৫৭ সালে কেরলে ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের নেতৃত্বে প্রথমবার ক্ষমতায় আসে কমিউনিস্ট সরকার। এরপর পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসন। কিন্তু, এখন সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে।
সিপিএম আজ কর্মীদের বলছে, ‘‘এর চেয়েও দুর্দিন আমরা দেখেছি।’’ তবে, ডেকার্স লেনের মতো জায়গা যেখানে দলের ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন লুপ্ত হয়ে গেছে, তা কি আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব? ইতিহাসের প্রশ্ন আজও রয়ে গেল।
ত্রিবেণী সঙ্গম থেকে পুণ্যার্থীদের সরাতে কঠোর পদক্ষেপ, ঘোড়সওয়ার পুলিশ নামাল যোগী সরকার