বেতন পেলেন ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা, এখন ভবিষ্যতের চিন্তা!
রাজ্যের হাজার হাজার স্কুলশিক্ষকের জন্য শেষমেশ কিছুটা স্বস্তি এল এপ্রিলের শেষ দিনে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার দুপুরের মধ্যে ‘যোগ্য’ হিসেবে স্বীকৃত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অ্যাকাউন্টে ঢুকে গেল চলতি মাসের বেতন। যদিও আদালতের নির্দেশে ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি স্থায়ী থাকলেও, এখনও ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।
বেতন নিয়ে শুরুতে ধোঁয়াশা
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র ‘যোগ্য’ (যাঁরা টেন্টেড বা অযোগ্য নন) শিক্ষকরা আপাতত স্কুলে কাজ করতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। কিন্তু রাজ্য শিক্ষা দফতর কোনো নির্দিষ্ট বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ায়, এপ্রিলের শুরুতে অনেক শিক্ষক অনিশ্চয়তায় ভুগছিলেন—তাঁরা আদৌ বেতন পাবেন কি না, তা নিয়ে ধন্দ ছিল। শেষ পর্যন্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের চিঠিতে বিষয়টি স্পষ্ট হয় এবং ‘যোগ্য’দের অ্যাকাউন্টে যথাসময়ে বেতন জমা পড়ে।
কে পেলেন, কে পেলেন না?
যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ‘যোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত, এবং গুগ্ল ফর্ম পূরণ করেছেন, তাঁদের অধিকাংশই বেতন পেয়েছেন। তবে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শতাধিক ‘যোগ্য’ শিক্ষক এখনও বেতন পাননি। তাঁদের দাবি, গুগ্ল ফর্ম ভরার পরেও নাম তালিকায় ওঠেনি। অনেকেই এই ভুলের জন্য এসএসসির (SSC) গাফিলতিকে দায়ী করেছেন।
ডিসেম্বর পর্যন্তই নিরাপদ?
এই মুহূর্তে ‘যোগ্য’দের চাকরি ও বেতন ডিসেম্বর পর্যন্ত সুরক্ষিত থাকলেও, এরপর কী হবে তা নিয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন রয়েছে। ‘যোগ্য শিক্ষক ঐক্যমঞ্চ’-এর আহ্বায়ক চিন্ময় মণ্ডল বলেন,
“আমরা চাই ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি ও বেতন নিশ্চয়তা। এটুকুই আমাদের আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য।”
অন্যদিকে শিক্ষক মেহবুব মণ্ডল জানান, অনেক ‘যোগ্য’ শিক্ষকের নাম তালিকায় না থাকায় তাঁরা বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি বলেন,
“সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই। আমরা শিক্ষামন্ত্রীকে ইমেল করব। জানতে চাই, এরপর কী পরিকল্পনা করছে রাজ্য।”
পটভূমি: কেমন করে এল এই সঙ্কট?
২০২৬ সালের এসএসসি নিয়োগ বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট, বাতিল হয় ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি। এর ফলে বহু স্কুলে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। পরে আদালত নির্দেশ দেয়, যাঁরা অযোগ্য বা টেন্টেড নন, তাঁরা আপাতত স্কুলে যোগ দিতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। তবে এই নির্দেশ গ্রুপ C ও গ্রুপ D-র জন্য প্রযোজ্য নয়।
উপসংহার
এই মুহূর্তে যাঁরা ‘যোগ্য’ হিসেবে কাজ করছেন, তাঁদের জন্য এটি আংশিক স্বস্তি হলেও ভবিষ্যৎ এখনও ধোঁয়াশায় ঢাকা। ডিসেম্বরের পরে কি হবে? সরকার কি ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরি ও বেতন নিশ্চিত করবে? সেই উত্তর এখনও অজানা। আপাতত শিক্ষক মহলে আশার আলো যতটুকু জ্বলেছে, তা নিভে না যায়, সেটাই প্রার্থনা।