Friday, February 7, 2025

‘ডিজিটাল গ্রেফতার’: সাইবার অপরাধ নিয়ে কেন্দ্রের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন

Share

ডিজিটাল গ্রেফতার: সাইবার অপরাধ

সম্প্রতি ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার এই সতর্কবার্তার পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সাইবার প্রতারণার নতুন এই ছক নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ বিষয়ক সমস্ত ঘটনা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি সাইবার অপরাধের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত পদক্ষেপ করার লক্ষ্যে কাজ করবে।

অমিত শাহের নেতৃত্বে নতুন গঠিত এই কমিটির পরিচালনায় থাকবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব। ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (১৪সি) দেশের সব রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। সাইবার অপরাধের চক্র বিভিন্ন নতুন পন্থা অবলম্বন করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণার শিকার করছে। অর্থ হারানো এবং ব্যক্তিগত নথি হাতানোর মতো ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ এই প্রতারণার অন্যতম একটি হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত কয়েক মাসে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ শব্দটি প্রায় সকলের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের গ্রেফতারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে চিন্তার সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার অপরাধ নথিভুক্তির পোর্টাল (এনসিআরপি)-এর তথ্যানুসারে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে প্রায় ৭ লাখ ৪০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা সাড়ে ১৫ লাখেরও বেশি ছিল। ২০২২ সালে অভিযোগের সংখ্যা ছিল সাড়ে ৯ লাখ, আর ২০২১ সালে তা ছিল সাড়ে ৪ লাখ। গত তিন বছরের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়, সাইবার অপরাধের উদ্বেগ কতটা গুরুতর।

ডিজিটাল গ্রেফতার

‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ কি?

প্রধানমন্ত্রী মোদী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, দেশের কোনো আইনেই ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ উল্লেখ নেই। এই ধরনের প্রতারণার শিকার হলে মানুষকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “ডিজিটাল গ্রেফতারির জালিয়াতি থেকে সাবধান থাকুন। তদন্তের জন্য কোনো সরকারি সংস্থা কখনোই ফোনে বা ভিডিও কলের মাধ্যমে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করবে না।” মোদী অযথা ভয় না পেয়ে মাথা ঠান্ডা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এবং এমন ফোন কল রেকর্ড করার কথা বলেছেন। এছাড়া, সম্ভব হলে স্ক্রিন রেকর্ড করার কথাও বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী জনগণকে আরো জানান, কোনো সরকারি তদন্তকারী সংস্থা অনলাইনে কাউকে হুমকি দেয় না। যখনই এমন ঘটনা ঘটবে, তখন তা ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে জানানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, “যদি এমন কিছু ঘটে, তবে তা আমাদের জানাতে হবে।”

এই পরিস্থিতিতে সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপে সাইবার অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পাওয়া যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আশাবাদী যে, এই উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে একটি কার্যকরী রূপরেখা তৈরি করবে। এই ধরনের অপরাধ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

সাইবার অপরাধের এই নতুন ছক প্রতিরোধের জন্য সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করাও অপরিহার্য। সাধারণ মানুষকে নিজ নিজ নিরাপত্তা বিষয়ে সতর্ক হতে হবে এবং সাইবার প্রতারণার শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে।

এদিকে, সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন এই কমিটি খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবে এবং আশা করা হচ্ছে যে তারা কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা বাড়ানো এবং সঠিক তথ্য প্রদান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তারা সাইবার প্রতারণার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে পারেন।

Read more

Local News