ডিজিটাল গ্রেফতার
সম্প্রতি সাইবার প্রতারণার একটি নতুন ধরন, ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’, ভারতে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে এই বিষয়ে জনগণকে সতর্ক করেছেন। এভাবে প্রতারিত হয়ে চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই লাখ লাখ মানুষ প্রায় ১২০ কোটি টাকা খুইয়েছেন। এই বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এবং সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত অন্যান্য সংস্থাগুলোও বিশেষভাবে সতর্ক করেছে দেশবাসীকে।
কী এই ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’?
‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ নামটি শুনে অনেকেই ভাবতে পারেন যে, এটি কোনোভাবে ডিজিটালি গ্রেফতার করার একটি পদ্ধতি। আসলে এটি সাইবার অপরাধীদের নতুন ধরনের প্রতারণা। প্রতারকেরা নিজেদের পুলিশ, সিবিআই, ইডি বা শুল্ক দফতরের কোনো অফিসার হিসেবে পরিচয় দিয়ে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাকে মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়। প্রায়ই ভিডিও কলে তারা সাজানো কক্ষ থেকে ফোন করে যা থানার মতো দেখতে, এবং কখনও পুলিশের সাইরেন বাজিয়ে পরিস্থিতি আরও ভীতিকর করে তোলে। এভাবে প্রতারকরা কৌশলে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে।
প্রতারণার কৌশল ও কৌশলগত পরিবর্তন
প্রথমে অপরাধীরা টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে এবং পুলিশ বা তদন্তকারী সংস্থার নাম করে মিথ্যা মামলার ভয় দেখায়। এরপর ভিডিও কলে তাদের সামনাসামনি কথা বলতে বলা হয়, যেখানে তারা থানার মতো পরিবেশে বসে থাকে। প্রতারকদের মধ্যে কেউ পুলিশ বা কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সেজে ভিডিও কলে অংশ নেয়, যাতে টার্গেট ব্যক্তি সহজে প্রভাবিত হয় এবং সন্দেহ না করে। অনেক সময় নকল নথি দেখিয়ে পরিস্থিতিকে আরও বাস্তব মনে করানো হয়। এভাবে প্রতারকরা ধীরে ধীরে টাকা আদায় করতে থাকে। একবার কেউ এই ফাঁদে পা দিলে, তারা মুক্তির জন্য অর্থ দাবি করতে থাকে যা কয়েক লাখ থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
সাইবার অপরাধের পরিসংখ্যান
সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সাইবার অপরাধের জন্য প্রায় ৭ লক্ষ ৪০ হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে, যা ২০২৩ সালের সাইবার অপরাধের মোট সংখ্যার তুলনায় প্রায় অর্ধেক। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে, সাইবার অপরাধের অভিযোগ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫.৫ লাখ। তার আগের বছর ২০২২ সালে তা ছিল ৯ লাখের বেশি এবং ২০২১ সালে ছিল প্রায় সাড়ে ৪ লাখ। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, কীভাবে সাইবার অপরাধ বেড়ে চলেছে এবং নতুন নতুন পদ্ধতিতে প্রতারণা বেড়েই চলেছে।
‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ ছাড়াও বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। লগ্নির প্রলোভন দেখিয়ে, বন্ধু সেজে এবং শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের নামে ১৪২০ কোটি টাকারও বেশি প্রতারণা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সতর্কবার্তা
প্রধানমন্ত্রী মোদী এই প্রতারণা নিয়ে জনগণকে সরাসরি সতর্ক করে বলেন, আইনে ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ বলে কোনো ব্যবস্থা নেই। কোনো সরকারি সংস্থা কখনোই ফোনে বা ভিডিও কলে কাউকে হুমকি দেয় না বা গ্রেফতার করার প্রক্রিয়া চালায় না। মোদী পরামর্শ দেন, কেউ যদি এমন কল পান, তবে ভীত না হয়ে ফোনকলটি রেকর্ড করা যেতে পারে এবং সম্ভব হলে স্ক্রিন রেকর্ডিংও করা উচিত। এ ধরনের তথ্য পরবর্তীতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, প্রতারণার শিকার হলে অবিলম্বে ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনে ফোন করা উচিত, যার নম্বর হলো ১৯৩০। এছাড়া স্থানীয় থানায়ও এই বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন তিনি।
কেনো এই সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
সাইবার অপরাধীরা যে কৌশল এবং প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তা প্রতিনিয়ত আরও জটিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ যাতে এই ধরনের প্রতারণার ফাঁদে না পড়ে, সেজন্য সরকারের তরফ থেকে এই সতর্কতাগুলো খুবই জরুরি। ‘ডিজিটাল গ্রেফতার’ প্রতারণা একদিকে মানুষের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে, অপরদিকে আর্থিক ক্ষতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সাধারণ মানুষের উচিত এমন ফোন বা ভিডিও কলে প্রভাবিত না হয়ে সতর্ক থাকা এবং সবসময় আইনানুগ সহায়তা গ্রহণ করা।