ডিজিটাল কর নিয়ে রুখে দাঁড়াল আমেরিকা!
আমেরিকার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সম্প্রতি তাদের উপর বেছে বেছে ডিজিটাল কর চাপানোর অভিযোগ তুলেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এবার থেকে আমেরিকান সংস্থাগুলির উপর অন্য দেশ অতিরিক্ত কর বসালে, আমেরিকাও পাল্টা শুল্ক আরোপ করবে। হোয়াইট হাউসের আধিকারিকদের ইতিমধ্যেই সেই নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বিদেশে আমেরিকান সংস্থাগুলির ‘বৈষম্যের শিকার’ হওয়ার অভিযোগ
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা আমেরিকার প্রযুক্তি সংস্থাগুলি বিভিন্ন দেশে ব্যবসা চালায়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কিছু দেশ শুধুমাত্র আমেরিকান সংস্থাগুলির কাছ থেকেই ডিজিটাল সার্ভিস ট্যাক্স আদায় করছে। আবার, নানা অজুহাতে জরিমানা ও কঠোর নিয়ম চাপিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। ট্রাম্প এই ব্যবস্থাকে ‘বৈষম্যমূলক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানান, ‘‘আমেরিকার সংস্থাগুলির উপর অন্য দেশের বাড়তি কর চাপানো মোটেই মেনে নেওয়া হবে না। কর বসানোর অধিকার একমাত্র আমেরিকার সরকারেরই রয়েছে।’’ ফলে, অন্য দেশগুলি যদি এই অন্যায় কার্যকলাপ চালিয়ে যায়, তাহলে আমেরিকাও তাদের পণ্য ও সেবার উপর পাল্টা শুল্ক বসাবে।
কোন কোন দেশ রয়েছে ট্রাম্পের নজরে?
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, বিশেষ কিছু দেশ শুধুমাত্র আমেরিকার সংস্থাগুলির উপর ডিজিটাল কর চাপিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক সুবিধা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে ফ্রান্স এবং কানাডা।
গত বছর ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন, ফ্রান্স এবং কানাডা শুধুমাত্র আমেরিকান সংস্থাগুলির কাছ থেকে বছরে প্রায় ৫০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪,৩০০ কোটি টাকা) কর বাবদ আদায় করছে। এই বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থা বন্ধ না হলে আমেরিকা পাল্টা পদক্ষেপ নেবে বলেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কী?
এটা প্রথমবার নয়, ট্রাম্প প্রশাসন এই ডিজিটাল কর নিয়ে আগেও তদন্ত শুরু করেছিল। প্রেসিডেন্টের দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বিশ্বের কোন কোন দেশে আমেরিকার সংস্থাগুলি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে। এর পর সেই দেশগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘‘অন্যান্য দেশগুলিতে আমেরিকান সংস্থাগুলির সঙ্গে ডিজিটাল করের নামে যা করা হচ্ছে, তা মেনে নেওয়া যাবে না। এবার আমরাও পাল্টা ব্যবস্থা নেব। খুব শিগগিরই এই কর নিয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা করা হবে।’’
আমেরিকার পাল্টা শুল্ক কীভাবে প্রভাব ফেলবে?
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি হিসাবে আমেরিকা অনেক দেশকেই ব্যবসায়িক সুবিধা দেয়। কিন্তু এবার ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, যদি কোনো দেশ আমেরিকান সংস্থাগুলির উপর অন্যায্য কর বসায়, তাহলে আমেরিকাও সেই দেশ থেকে আমদানি হওয়া পণ্য ও পরিষেবার উপর কঠোর শুল্ক আরোপ করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। বিশেষ করে ইউরোপ ও কানাডার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
শেষ কথা
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য নীতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। আমেরিকান সংস্থাগুলিকে রক্ষা করতে নেওয়া এই কঠোর পদক্ষেপ অন্যান্য দেশগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এখন দেখার বিষয়, কানাডা ও ফ্রান্সের মতো দেশগুলি কি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, নাকি সমঝোতার পথ খোঁজে!
গবেষণার আড়ালে সামরিক পরিকল্পনা? সমুদ্রের গভীরে চিনের রহস্যময় কেন্দ্র ঘিরে উদ্বেগ