ডিজিটাইজ়েশনে ধীরগতি কেন?
উত্তর কলকাতার বেলেঘাটা এলাকায় ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়ায় (এসআইআর) বড়সড় গাফিলতি ধরা পড়ল। এনুমারেশন ফর্ম ডিজিটাইজ়েশনে অস্বাভাবিক ধীরগতির অভিযোগে সাত জন বুথ লেভেল অফিসারকে (বিএলও) শোকজ় নোটিস পাঠাল নির্বাচন কমিশন। এই নোটিসে কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে— এত কম ডিজিটাইজ়েশন অগ্রহণযোগ্য এবং গোটা বিধানসভা এলাকার কাজের গতিকেই এর ফলে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে।
ভোটারদের দেওয়া এনুমারেশন ফর্ম সংগ্রহের পরে তা নির্দিষ্ট মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে ডিজিটাইজ় করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলেঘাটার এই সাত বিএলও সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেননি। যেখানে অন্যান্য অঞ্চলে মোট সংগ্রহ হওয়া ফর্মের প্রায় ৩০ শতাংশ ইতিমধ্যেই ডিজিটাল আকারে আপলোড হয়ে গেছে, সেখানে এই সাত জন মাত্র ৪ থেকে ৮ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজ় করতে পেরেছেন। ফলে কমিশনের সন্দেহ— তাঁরা কি কাজে উদাসীন, নাকি প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে? নোটিসে এই প্রশ্নেরই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর থেকে এনুমারেশন ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। রাজ্যের সব জেলায় দ্রুততার সঙ্গে এই কাজ এগোলেও বেলেঘাটার এই নির্দিষ্ট অংশে কাজ প্রায় স্তব্ধ। কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছ’টা পর্যন্ত রাজ্যের ৯৯.৭৩ শতাংশ ভোটারের বাড়িতে এনুমারেশন ফর্ম পৌঁছে গেছে। সেই সঙ্গে ২৫.৫ শতাংশ ফর্ম ইতিমধ্যেই ডিজিটাইজ় করা সম্ভব হয়েছে। এ অবস্থায় বেলেঘাটার এই অস্বাভাবিক ধীরগতি কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই বাধ্য করেছে।
শোকজ় নোটিসে কমিশন তীব্র ভাষায় বলেছে, ‘‘ডিজিটাইজ়েশনের কাজ এমন ধীরগতিতে চলছে যে, তাকে কার্যত ‘অগ্রগতিহীন’ বলাই যায়। এর ফলে বিধানসভা এলাকার সামগ্রিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে।’’ তাই শুক্রবার দুপুর ১২টার মধ্যে সাত বিএলও-কে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে— কেন তাঁদের এলাকায় এত কম ফর্ম ডিজিটাইজ় হয়েছে?
এনুমারেশন ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। হাতে সময় কম। ৯ ডিসেম্বর প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার তালিকা। তার আগে এই পুরো কাজ শেষ করতে না পারলে বড়সড় জটিলতা তৈরি হতে পারে। সে কারণে কমিশন চাইছে প্রতিটি এলাকায় কাজের গতি বাড়ুক। কিন্তু বেলেঘাটার এই ক্ষেত্রে মিলেছে উল্টো ছবি, যা ভোটারের তথ্য সংগ্রহের সমগ্র প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিতে ফেলছে।
এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, বিএলও-দের উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, প্রক্রিয়াটি পরিকল্পনাহীন এবং যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া শুরু করা হয়েছে। অন্য দিকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী পাল্টা দাবি করেছেন, এই ঢিলেমি তৃণমূল পরিচালিত প্রশাসনের ‘ইচ্ছাকৃত ব্যর্থতা’।
সব মিলিয়ে ডিজিটাইজ়েশন নিয়ে এই ধীরগতি শুধু প্রশাসনিক স্তরেই নয়, রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কমিশনের শোকজ়ে সাত বিএলও কী জবাব দেন এবং ভবিষ্যতে এই কাজের গতি বাড়ে কি না, সেদিকেই এখন নজর রাজ্যের।

