নভজোৎ সিংহ সিধুর স্ত্রীর লড়াইয়ের গল্প
ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই মানেই জীবন-মৃত্যুর এক তীব্র দ্বন্দ্ব। নভজোৎ সিংহ সিধু, প্রাক্তন ক্রিকেটার এবং রাজনীতিবিদ, তাঁর স্ত্রীর ক্যানসার মোকাবিলার সাহসী গল্প শোনালেন। চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগকে হারিয়ে আজ সম্পূর্ণ সুস্থ নভজোৎ কউর। তাঁদের এই লড়াইয়ে ছিল চিকিৎসার পাশাপাশি কঠোর ডায়েটের ভূমিকা।
কঠিন সময়ের শুরু
২০২৩ সালের মার্চ মাসে নভজোৎ কউর জানতে পারেন তিনি চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত। সেই সময় তাঁর স্বামী সিধু ছিলেন কারাগারে, এক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে। ছেলের বিয়ের পর নভজোৎ যখন এই ধাক্কাটি সামলাচ্ছিলেন, তখন তিনি ভেঙে না পড়ে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেন। পাতিয়ালার রাজেন্দ্র মেডিক্যাল কলেজে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৩ শতাংশ।
কেমন ছিল ডায়েট পরিকল্পনা?
নভজোৎ কউরের এই যাত্রায় কঠোর ডায়েট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তিনি প্রতিদিন লেবুজল দিয়ে দিন শুরু করতেন। তারপর ১০-১২টি নিমপাতা চিবিয়ে খেতেন। তাঁর খাদ্যতালিকায় ছিল কাঁচা হলুদ, অ্যাপ্ল সাইডার ভিনেগার, কুমড়ো, বেদানা, আমলকি, বিট, আখরোট, এবং বিভিন্ন ধরনের বেরি। বেরিজাতীয় ফল ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকর বলে মনে করা হয়। রান্নার জন্য ব্যবহার করা হতো নারকেল তেল বা আমন্ড অয়েল।
নভজোৎ কউর নিয়মিত ‘ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং’ পদ্ধতি মেনে চলতেন। সন্ধে সাড়ে ৬টায় তিনি দিনের শেষ খাবারটি খেতেন এবং পরের দিন সকাল সাড়ে ১০টার আগে কিছুই খেতেন না। তাঁর পানীয় জলের পিএইচ মাত্রা ছিল ৭, যা শরীরের অম্লত্ব নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, যেমন ভাত, রুটি, চিনি, পুরোপুরি বাদ দিয়েছিলেন।
চিকিৎসকের মতামত
চিকিৎসকেরা বলছেন, শুধু ডায়েট দিয়ে ক্যানসার পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে উন্নত চিকিৎসা এবং ডায়েটের সংমিশ্রণে অনেক সময় চতুর্থ পর্যায়ের ক্যানসার রোগীরাও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ পুনিত গুপ্ত জানিয়েছেন, ‘‘চিকিৎসার পাশাপাশি ডায়েট রোগীর শরীর চাঙ্গা রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে ওজন কমে যাওয়া বা ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতার মতো সমস্যাগুলি মোকাবিলায় এটি সহায়ক।’’
হলুদ এবং কারকিউমিন
নভজোৎ কউরের খাদ্যতালিকায় কাঁচা হলুদ উল্লেখযোগ্য একটি উপাদান ছিল। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন যৌগ ক্যানসারের কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দিতে পারে বলে গবেষণায় প্রমাণিত। তবে মানুষের শরীরে এটি কতটা কার্যকর, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি।
সিধুর মন্তব্য
নভজোৎ সিংহ সিধু বলেন, ‘‘আমাদের অর্থবল বা উন্নত চিকিৎসার কারণে নয়, বরং কঠোর নিয়মানুবর্তিতা এবং অধ্যবসায়ের জন্যই নভজোৎ ক্যানসারকে হারাতে পেরেছে।’’ তিনি আরও জানান, তাঁদের জীবনের এই চ্যালেঞ্জ তাঁদের পরিবারকে আরও কাছাকাছি এনেছে।
শিক্ষণীয় দিক
নভজোৎ কউরের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইটি কেবল রোগমুক্তির একটি গল্প নয়, এটি মানুষকে একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়—নিয়মানুবর্তিতা, ডায়েট এবং মনোবলের সংমিশ্রণে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। যদিও ক্যানসার মোকাবিলায় উন্নত চিকিৎসার বিকল্প নেই, জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এর প্রভাব কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব।
এই গল্প কেবল সিধু বা তাঁর স্ত্রীর নয়; এটি এমন প্রতিটি মানুষের জন্য একটি উদাহরণ যারা জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিয়মিত চিকিৎসার সঙ্গে সঠিক ডায়েট এবং মনের জোর যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এই কাহিনির মাধ্যমে স্পষ্ট।

