ডলারের সামনে হাঁপাচ্ছে রুপি!
ডলারের নিরিখে ভারতীয় রুপির অবমূল্যায়ন থামছেই না। জানুয়ারি থেকে নভেম্বর, মাত্র ১১ মাসে রুপির দর পড়েছে ৪.৩ শতাংশ! এক ডলারের দাম পৌঁছে গিয়েছে ৮৯ টাকা-র গণ্ডি পেরিয়ে। অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা— বর্তমান গতিতে চললে রুপি এবার ৯০-এর দোরগোড়ায় পৌঁছে যাবে। ইতিমধ্যেই এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পারফর্মিং কারেন্সি-র তকমা পেয়েছে ভারতীয় মুদ্রা। এমনকি বাংলাদেশের টাকার চেয়েও খারাপ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে রুপি।
🔻 কেন এত দ্রুত পড়ছে রুপির দাম?
বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের সামনে রুপির দুর্বল হয়ে পড়ার মূল কারণ কয়েকটি—
১. ট্রাম্পের শুল্কনীতি ভারতকে ধাক্কা দিয়েছে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের এপ্রিল থেকে দু’দফায় ভারতীয় পণ্যে ৫০% পর্যন্ত শুল্ক বাড়িয়েছেন। ফলে আমেরিকায় ভারতীয় রফতানি কমেছে ব্যাপক ভাবে।
👉 ডলার আসা কমে গেছে
👉 রিজার্ভ ব্যাংকের ডলার স্টক চাপে পড়েছে
২. আরবিআই-র ডলার কেনা বেড়েছে
যখন ডলার বিশ্ববাজারে দাম বাড়ে, তখন তার রিজার্ভ ধরে রাখতে আরো বেশি দামে ডলার কিনতে হয়।
👉 এতে বাজারে ডলারের চাহিদা বাড়ছে
👉 স্বাভাবিকভাবেই রুপির মূল্য পড়ে যাচ্ছে
৩. বাণিজ্য ঘাটতি ভয়াবহ
চিন, রাশিয়া ও পশ্চিম এশিয়া থেকে আমদানি প্রচুর।
👉 আমদানি বেশি → ডলার খরচ বেশি
👉 রিজার্ভে চাপ → রুপি দুর্বল
৪. বিদেশে মূলধন বেরিয়ে যাচ্ছে
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ ডলারের দ্রুত উত্থানে টাকা তুলে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে।
👉 এতে বাজারে টাকার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।
💱 এশিয়ার মুদ্রার দৌড়ে রুপি সবার শেষে কেন?
ব্রোকারেজ রিপোর্ট অনুযায়ী, এশিয়ার যেসব মুদ্রা ডলারের সামনে তুলনামূলক শক্ত অবস্থানে—
- মালয়েশিয়ার রিঙ্গিত
- তাইওয়ানিজ ডলার
- থাই ভাট
- চীনা ইউয়ান
যেসব মুদ্রা দুর্বল—
- বাংলাদেশের টাকা
- ইন্দোনেশিয়ার রুপিয়াহ
- ফিলিপিন্সের পেশো
- ভিয়েতনামের ডঙ
➡ কিন্তু সবচেয়ে খারাপ পারফরমার হল ভারতীয় রুপি।
📉 টাকার দাম পড়লে বিপদ কোথায়?
১. আমদানি আরও ব্যয়বহুল
ভারত সবচেয়ে বেশি আমদানি করে—
- অপরিশোধিত তেল (৮৮%)
- ইলেকট্রনিক্স (৬৫%)
- যন্ত্রাংশ (৭০%)
- রাসায়নিক (৪৫%)
- সার ও ডাল-তেল প্রায় সম্পূর্ণই বিদেশ থেকে
রুপি ১% পড়লেই শুধু তেলের পেছনে অতিরিক্ত ১৩৭ কোটি ডলার খরচ হয়!
২. মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে
আমদানি-নির্ভর পণ্য—
➡ পেট্রল
➡ রান্নার তেল
➡ সার
➡ বৈদ্যুতিন জিনিস
সবকিছুর দাম আরও বাড়বে। চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে।
৩. বাণিজ্য ঘাটতি আরও ভয়ংকর হবে
🟢 রুপির পতনের কি কোনও লাভ আছে?
হ্যাঁ, কিছু সুবিধাও রয়েছে—
✔ বিদেশে ভারতীয় পণ্য সস্তা হবে
ডলার ১০০ টাকায় গেলে মার্কিন বাজারে ভারতীয় পণ্য বলবে একরকম “জলের দাম”!
👉 ফলে রফতানি বাড়তে পারে
👉 ট্রাম্পের শুল্কবৃদ্ধির চাপ কিছুটা কমবে
✔ আইটি সেক্টরে কর্মসংস্থান বাড়বে
ডলার শক্তিশালী হলে বিদেশে ভারতের শ্রমিক সস্তা মনে হবে।
👉 ফলে আইটি ও আউটসোর্সিং সেক্টর লাভবান
✔ পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে
বিদেশি পর্যটকের কাছে ভারত হয়ে উঠবে সস্তা গন্তব্য।
✔ শেয়ার বাজার চাঙ্গা
রুপির পতনে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজারে ঢুকছে।
👉 নভেম্বরেই সেনসেক্স-নিফটি উঠেছে সর্বকালের সর্বোচ্চে।
📌 রুপি কি সত্যিই ৯০ ছুঁবে?
বহু অর্থনীতিবিদের মতে—
👉 আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি না হলে
👉 ট্রাম্প শুল্ক না কমালে
👉 আরবিআই ডলার কেনা না থামালে
রুপি খুব তাড়াতাড়ি ৯০-এর নিচে নামতে পারে।
৩–৫ ডিসেম্বর বসছে আরবিআইয়ের মুদ্রানীতি কমিটির বৈঠক।
➡ সুদের হার কমানো হবে কি না,
➡ মুদ্রাস্ফীতি কেমন সামলানো হবে,
➡ রুপির পতন ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—
সেদিকে এখন তাকিয়ে দেশ।
রুপির টানা দুরবস্থায় সাধারণ মানুষ থেকে বাজার— সকলেই এখন অপেক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পরবর্তী পদক্ষেপের।

