Wednesday, February 12, 2025

ট্রাম্প জিততেই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াল হিজ়বুল্লা! আমেরিকার পালাবদলের কী প্রভাব পশ্চিম এশিয়ায়?

Share

ট্রাম্প জিততেই আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াল হিজ়বুল্লা

২০২৪ সালের ৬ নভেম্বর, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার পর, যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বারের মতো জয়লাভের সম্ভাবনা স্পষ্ট হয়, তখন থেকেই পশ্চিম এশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি বদলে যায়। ইজ়রায়েল পন্থী রিপাবলিকান নেতা ট্রাম্পের জয়, ইরান ও শিয়া সমর্থিত সংগঠনগুলির জন্য রীতিমতো শঙ্কার সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের ক্ষমতায় আসা অর্থে ইরান বিরোধী নীতির আরও কঠোর বাস্তবায়ন হতে পারে। আর তাই, হিজ়বুল্লা, যে ইরানের মদতে পরিচালিত এক সুপরিচিত জঙ্গি সংগঠন, তারা ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে এক নতুন আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়ে দিয়েছে।

এতটুকু সময় নষ্ট না করে, হিজ়বুল্লা ৬ নভেম্বরের পরপরই নতুন করে ইজ়রায়েলকে লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে। রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা করে তারা ইজ়রায়েলের বিভিন্ন শহর এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যেমন বিমানঘাঁটি, বন্দর এবং সেনাঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ চালায়। ‘দ্য টাইমস অফ ইজ়রায়েল’ পত্রিকার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্পের জয় নিশ্চিত হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ১৫০টিরও বেশি রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। উত্তর গ্যালিলি, তেল আভিভ এবং একরের মতো শহরে এই হামলাগুলি আছড়ে পড়ে, যার ফলে ইহুদি ভূখণ্ডের বেশ কয়েকটি শহরে সাইরেনের শব্দ শোনা যায়। কিছু শহরের বাসিন্দারা বাঙ্কারে আশ্রয় নেন।

এই হামলার ফলে ইজ়রায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) যদিও তাদের শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ব্যবহার করে বেশ কিছু রকেটকে ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল, তবে সবকটিকেই তারা মাঝ আকাশে ধ্বংস করতে পারেনি। এর ফলে কিছু শহরের মধ্যে আক্রমণের ধ্বংসাত্মক প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য জনগণকে আশ্রয় নিতে হয়েছে। বিশেষ করে, হাইফা, আশদোদ, জাফা, হাদেরা, এবং আশকেলন শহরের উপর হামলা চালানো হয়েছিল, যা ইজ়রায়েলের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলি। এই হামলাগুলিতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল, তবে পুরোপুরি সফল হয়নি।

এছাড়া, ইজ়রায়েলি বিমান বাহিনী সম্প্রতি লেবাননে হিজ়বুল্লার গুপ্ত ঘাঁটিগুলির উপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাদের দাবি, প্রায় ৯০ শতাংশ ঘাঁটি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যদিও ইহুদি বাহিনী তাদের অভিযান চালিয়ে সফলতা অর্জন করলেও, হিজ়বুল্লা এবং ইরানের সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলি সহজে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতা রাখে।

এদিকে, গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, সিরিয়া ও জর্ডনের কাছ থেকে হিজ়বুল্লা শক্তি পাচ্ছে। এই দুটি দেশ তাদের কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছে। সিরিয়া এবং জর্ডনে আশ্রিত শিয়া বিদ্রোহীরা, যাদের হিজ়বুল্লা প্রশিক্ষণ দিয়েছে, তারা ইহুদি ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শামিল হচ্ছে। এমনকি, ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা ‘মোসাদ’ জানিয়েছে, জর্ডন এবং সিরিয়ায় আশ্রিত যোদ্ধাদের সুরক্ষা দিয়ে শীর্ষ নেতা শেখ নাইম কাসেম ইহুদি শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিচ্ছে। তাদের কাছে এক লাখেরও বেশি জঙ্গি সৈন্য আছে, যারা ইজ়রায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর, ইরান এবং তার মিত্ররা পাল্টা আক্রমণ পরিকল্পনা করেছে। শিয়া সংগঠন ‘ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোর’ (আইআরজিসি) এর জেনারেলদের সঙ্গে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনাই বৈঠক করেছেন। যদিও ট্রাম্প প্রশাসন দাবি করছে, ইরানের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য তারা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে, তবে আইডিএফের লক্ষ্য ইরানের সমর্থনপুষ্ট বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দুর্বল করা। একই সঙ্গে, সিরিয়া এবং জর্ডনের মধ্যেও মিত্রতা এবং শক্তির ভারসাম্য পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ইজ়রায়েলি বাহিনী ইতিমধ্যেই একাধিক সিরিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে ইরান ও হিজ়বুল্লার অবস্থান দুর্বল করতে মরিয়া। তাদের বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া এবং লেবাননে আক্রমণ চালিয়ে আসছে এবং এই অঞ্চলে শিয়া গোষ্ঠীকে ধ্বংস করার জন্য আইডিএফের নতুন আক্রমণ শানানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এছাড়া, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর, আমেরিকা এবং ইজ়রায়েলের সম্পর্ক আরও জোরদার হতে পারে। বিশেষ করে, আমেরিকার পশ্চিম এশিয়ায় সক্রিয় সেনাবাহিনী এবং এই অঞ্চলের ব্যাপক কৌশলগত পরিবর্তনগুলির প্রেক্ষিতে, আমেরিকা ইরান এবং তার মিত্রদের বিরুদ্ধে নতুন ‘প্রক্সি’ যুদ্ধের কৌশল নিয়ে কাজ করতে পারে। এর মধ্যে কুর্দ বিদ্রোহীদের সহায়তায় ইরানের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

এভাবেই, পশ্চিম এশিয়ায় ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট পদে বসা, শুধুমাত্র আমেরিকার রাজনৈতিক চিত্রকে নয়, বরং পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে একটি নতুন, বিপজ্জনক দিক দিয়ে ঠেলে দিয়েছে। যেখানে একদিকে ইজ়রায়েলি বাহিনী একের পর এক হামলা চালিয়ে শত্রু শক্তিকে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত, অন্যদিকে হিজ়বুল্লা এবং ইরান এই যুদ্ধকে আরও জটিল করে তোলার জন্য প্রতিশোধের পথে হাঁটছে। এই পরিস্থিতি পরবর্তী সময়ে পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ককে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে চলেছে।

Read more

Local News