ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বন্দ্বের মাসুল!
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির জন্য একের পর এক চ্যালেঞ্জ আসছে। রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ তিন বছরের যুদ্ধে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ দখল কুর্স্ক, কিন্তু সেটিও এখন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায়। পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে আমেরিকার সামরিক সহায়তা বন্ধ হওয়ায়। আর এই সহায়তা বন্ধের নেপথ্যে রয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি সম্প্রতি ওভাল অফিসে জ়েলেনস্কির সঙ্গে এক উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেছিলেন।
ট্রাম্পের রাগ, ইউক্রেনের বিপদ
ওয়াশিংটনে বৈঠকের সময় ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিয়ে ট্রাম্পের কাছে স্পষ্ট আশ্বাস চেয়েছিলেন জ়েলেনস্কি। তবে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল ভিন্ন। শান্তিচুক্তির আগে ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদের ওপর আমেরিকার নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন তিনি। সেই বিতর্কের জেরে বৈঠক মাঝপথেই ছেড়ে বেরিয়ে যান ট্রাম্প, আর তার পরপরই কিয়েভের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দেন। ফলে এক গভীর সংকটের মুখে পড়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী।
কুর্স্কে রুশ বাহিনীর তীব্র আক্রমণ
গত সাত মাস ধরে কুর্স্ক দখলে রেখেছিল ইউক্রেনীয় বাহিনী। কিন্তু এখন সেটিও রুশ বাহিনীর প্রবল হামলার সামনে নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ‘অপারেশন ব্লিৎজক্রিগ’ নামক নতুন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে মস্কো ধীরে ধীরে ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘিরে ফেলছে। প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যদি কুর্স্ক থেকে পিছু না হটে, তাহলে তারা ১০ হাজারেরও বেশি সৈন্য হারাতে পারে।
অস্ত্র ও গোয়েন্দা তথ্যের অভাব
মার্কিন সহায়তা বন্ধ হওয়ায় অস্ত্র এবং গোয়েন্দা তথ্যের ব্যাপক সংকটে পড়েছে ইউক্রেন। এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট এবং গোপন গোয়েন্দা তথ্যের উপর নির্ভর করে চলছিল জ়েলেনস্কির বাহিনী। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞায় তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে রুশ বাহিনীর অগ্রগতির বিরুদ্ধে লড়াই করাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
ইউরোপের দ্বিধা, ব্রিটেনের সমর্থন
যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হলেও ইউরোপের দেশগুলো এখনো দ্বিধাগ্রস্ত। ফ্রান্স ও জার্মানি এখনো সেনা পাঠানোর ব্যাপারে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। অন্যদিকে, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি স্পষ্ট জানিয়েছেন যে তারা ইউক্রেনে সেনা পাঠাবে না এবং কিয়েভকে আলোচনার পথে হাঁটার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে ব্রিটেন ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এছাড়াও ইউক্রেনের বিমানবাহিনী ফরাসি ‘মিরাজ-২০০০’ যুদ্ধবিমান ব্যবহার শুরু করেছে। কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শুধুমাত্র এই সহায়তা দিয়ে কুর্স্কের যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়।
জ়েলেনস্কির সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত
কুর্স্কের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে ইউক্রেনকে হয় পিছু হটতে হবে, নয়তো আরও হাজার হাজার সৈন্যের প্রাণ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। যদিও কিয়েভ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা করেনি, তবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই ইউক্রেনের জন্য সবচেয়ে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ হবে। কুর্স্ক থেকে পিছু হটার অর্থ হবে ইউক্রেনের বড় কৌশলগত পরাজয়।
এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ট্রাম্প যদি পুনরায় আমেরিকার সামরিক সহায়তা বন্ধ রাখেন এবং ইউরোপের দেশগুলো যদি দ্বিধাগ্রস্ত থাকে, তবে ইউক্রেনের জন্য আগামী মাসগুলো হবে আরও কঠিন ও অস্থির।
ভারতের বদলার জয়: ২৫ বছর পর নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি রোহিতদের হাতে

