Friday, February 21, 2025

ট্রাম্পের শুল্ক-বোমা! ভারতের রফতানি বাজারে ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা

Share

ট্রাম্পের শুল্ক-বোমা!!

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে ভারতের রফতানি শিল্প ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে। ‘পারস্পরিক শুল্ক’ (Reciprocal Tariff) নীতির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে বছরে প্রায় ৭০০ কোটি ডলার লোকসান গুনতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সিটি রিসার্চ। ভারতের গাড়ি, ওষুধ, রত্ন ও গহনা, রাসায়নিক এবং কৃষিপণ্যের ওপর এই শুল্কের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নতুন শুল্ক নীতি: ভারতের জন্য কতটা বিপজ্জনক?

২০২৫ সালের এপ্রিলে মার্কিন সরকার নতুন শুল্ক নীতি চালু করতে পারে, যা ভারতীয় রফতানির জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াবে। সিটি রিসার্চ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারত থেকে রফতানি হওয়া পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্ক বসালে, ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে উঠবে এবং বাজার ধরে রাখা দুরূহ হবে।

গত বছর ভারত যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৭,৪০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছিল। এর মধ্যে মুক্তা, হীরা ও গয়নার পরিমাণ ছিল ৮৫০ কোটি ডলার, ওষুধ ৮০০ কোটি ডলার এবং পেট্রোপণ্য ৪০০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক নীতির ফলে এই খাতগুলোর রফতানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ভারত-মার্কিন বাণিজ্যে নতুন দ্বন্দ্ব

২০২৩ সালে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানির ওপর গড়ে ১১% শুল্ক আরোপ করেছিল, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর মাত্র ২.৪% শুল্ক বসায়। এই পার্থক্য নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে অসন্তুষ্ট ট্রাম্প প্রশাসন। ট্রাম্পের মতে, ভারতীয় পণ্য যদি কম শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারে, তবে মার্কিন পণ্যের ক্ষেত্রেও ভারতকে একই সুবিধা দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ অনুযায়ী, ভারতে মার্কিন কৃষিপণ্যের গড় শুল্ক প্রায় ৩৯%, যেখানে অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে এটি গড়ে ৫%। আমেরিকান মোটরবাইকের ওপর ভারত ১০০% শুল্ক বসায়, অথচ ভারতীয় গাড়ি ও বাইক মাত্র ২.৪% শুল্ক দিয়েই মার্কিন বাজারে প্রবেশ করে। ট্রাম্পের নতুন নীতিতে এই ভারসাম্য পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে।

ভারতের প্রস্তুতি: কী করতে পারে মোদী সরকার?

ভারতীয় অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই সম্ভাব্য ক্ষতি কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। মার্কিন শুল্ক নীতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর কেন্দ্রের পক্ষ থেকে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে নয়াদিল্লি, যেমন—দামি মোটরবাইকের শুল্ক ৫০% থেকে কমিয়ে ৩০% করা হয়েছে এবং বোরবন হুইস্কির শুল্ক ১৫০% থেকে কমিয়ে ১০০% করা হয়েছে।

বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের মন গলাতে ভারত হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ ছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।

ট্রাম্পের আগের শুল্ক-যুদ্ধের অভিজ্ঞতা

এই ধরনের শুল্ক-যুদ্ধের ফলে কী হতে পারে, তার একটি ভালো উদাহরণ ২০১৮ সালের ঘটনা। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করেছিলেন, যার ফলে আমেরিকান ইস্পাতশিল্পে মাত্র ১,০০০ কর্মসংস্থান তৈরি হলেও, গাড়ি ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ৭৫,০০০ চাকরি নষ্ট হয়। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এবারও এমন কিছু ঘটতে পারে, যা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

উপসংহার: ভারতের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি কার্যকর হলে ভারতের রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ধাক্কা আসতে পারে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সামাল দিতে চাইছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তির পথে হাঁটতে পারে। পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ভারত-মার্কিন বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।

মাটির নীচ থেকে গর্জনের শব্দ! ভূমিকম্পের নতুন অভিজ্ঞতায় আতঙ্কিত দিল্লিবাসী— কেন হল এমন?

Read more

Local News