ট্যাবের টাকা ঢুকছে না ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে
রাজ্য সরকারের ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের আওতায় একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য ট্যাব কেনার জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। পুজোর ছুটির আগে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুল থেকে নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদন করা হয়েছিল। তবে অভিযোগ উঠেছে, অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের ট্যাবের টাকা পায়নি বা টাকা অন্য কোন অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। এই ঘটনা নিয়ে সবার মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে, এবং প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ দায়ের হয়েছে থানাতেও, এবং বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে শিক্ষা দফতর।
উত্তর ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বর্ধমানের কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অভিযোগ ওঠে, তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ট্যাবের জন্য বরাদ্দ টাকা ঢুকছে না। এ ছাড়া অনেকের টাকা চলে যাচ্ছে অন্য অ্যাকাউন্টে। এই ঘটনায় বনগাঁ এবং বর্ধমানে শোরগোল পড়ে গেছে। বনগাঁর কবি কেশবলাল বিদ্যাপীঠের ২২ জন ছাত্রছাত্রীর অভিযোগ, তারা ট্যাবের টাকা পায়নি। শুধু কবি কেশবলাল বিদ্যাপীঠ নয়, বনগাঁর আরেকটি স্কুলে, শক্তিগড় হাই স্কুলে ছয় ছাত্রছাত্রীর এমন অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের সিএমএস হাই স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির মোট ৪১২ জন ছাত্রছাত্রী আবেদন করেছিলেন ট্যাবের জন্য বরাদ্দ টাকা পাওয়ার উদ্দেশ্যে। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২৮ জন ছাত্রছাত্রী তাদের অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা পাননি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মিন্টু রায় জানিয়েছেন, ২১ ও ২২ অক্টোবর ফোনে তারা জানতে পারেন যে, ওই ২৮ জন ছাত্রছাত্রীর অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকেনি। এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রদের ব্যাঙ্কে যেতে বললে তারা জানতে পারেন, টাকার পরিমাণ অন্য অ্যাকাউন্টে চলে গেছে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন, স্কুলের পক্ষ থেকে কোনো ভুল ছিল না। প্রত্যেক ছাত্রের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের KYC আপডেট করা ছিল। স্কুলের পক্ষ থেকে বিষয়টি জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই), অতিরিক্ত জেলাশাসক (শিক্ষা), এবং ডিপিওকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, সাইবার থানাতেও অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে, যারা ট্যাবের টাকা পাননি, তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। একাদশ শ্রেণির ছাত্র জুনেদ চৌধুরী, সুদীপ্ত ধীবররা জানিয়েছেন, ‘‘এখন জানি না টাকা পাব কি না। টাকা না মেলায় আমরা ট্যাব কিনতে পারছি না। পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে।’’ তাদের অভিযোগ, বর্তমানে অনেক ক্লাসই অনলাইনে হয়ে থাকে, আর এই ক্লাস করার জন্য স্মার্টফোন বা ট্যাবের প্রয়োজন। কিন্তু তাদের এই সামর্থ্য নেই, তাই সরকারের কাছ থেকে ট্যাবের টাকা পেলেই সমস্যার সমাধান হবে।
বনগাঁর অন্য একটি স্কুলেও এমন ঘটনা ঘটেছে। কিছু ছাত্রছাত্রীর অ্যাকাউন্টে ট্যাবের টাকা ঢোকেনি বলে শোরগোল উঠেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, ছাত্রদের অ্যাকাউন্ট নম্বর পরিবর্তিত হওয়ার কারণে এই ঘটনা ঘটতে পারে। তারা দ্রুত সমাধানের জন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ইমেল করেছে এবং স্কুল পরিদর্শক অফিস ও থানাতেও লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।
এমন অভিযোগের পর রাজ্য প্রশাসন ও শিক্ষা দফতর অস্বস্তিতে পড়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, বর্ধমান, এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের এই সমস্যা নিয়ে আলোচনার মধ্যে, শিক্ষা দফতর নড়েচড়ে বসেছে। কেন আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকার সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে তারা।
এটা স্পষ্ট যে, ট্যাব কেনার জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল, তা যথাসম্ভব সঠিকভাবে ছাত্রদের হাতে পৌঁছানো উচিত ছিল। কিন্তু এই ধরনের সমস্যা তৈরি হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিলে ছাত্রদের সমস্যার সমাধান হতে পারে।