Thursday, February 13, 2025

টাকার পতন রুখতে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র?

Share

টাকার পতন রুখতে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর

ডলারের তুলনায় টাকার অব্যাহত পতনে উদ্বেগে গোটা দেশ। সম্প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য বেড়ে ৮৬.৭০ টাকা ছুঁয়েছিল, যা টাকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে—আর কতটা নিচে নামবে ভারতীয় মুদ্রা? এমন পরিস্থিতিতে সরকার আসন্ন বাজেটে আমদানি শুল্ক বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে বলে মত দিয়েছে উপদেষ্টা সংস্থা ইওয়াই। শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ডলারের চাহিদা কমানোর পরিকল্পনা করা হতে পারে।

গত কয়েক দিনের মধ্যে টাকা সামান্য শক্তিশালী হলেও সমস্যা পুরোপুরি মেটেনি। মঙ্গল ও বুধবারে ডলার ৩০ পয়সা কমে ৮৬.৪০ টাকায় দাঁড়ালেও সামগ্রিক পরিস্থিতি বেশ চাপের। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য আনতেই আমদানি শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব বাস্তবায়িত হতে পারে।

ডলারের চাহিদা কেন বাড়ছে?

ভারতে সবচেয়ে বেশি ডলার খরচ হয় আমদানি পণ্যের দাম মেটাতে। যেমন, তেল, গ্যাস, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, ওষুধের কাঁচামাল ইত্যাদি। আমদানি যত বাড়ে, ডলারের চাহিদাও তত বাড়ে। আর এই চাহিদাই ডলারের দাম বাড়িয়ে তোলে।

বর্তমানে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে মূলত দু’টি কারণ কাজ করছে:

  1. বিদেশি লগ্নিকারীদের পুঁজি প্রত্যাহার: বিদেশি সংস্থাগুলি ভারতের শেয়ার বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছে। তারা শেয়ার বিক্রি করে যে টাকা পাচ্ছে, তা ডলারে রূপান্তর করে দেশের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ডলারের চাহিদা বাড়ছে।
  2. আমদানি বৃদ্ধি: আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এবং অন্যান্য আমদানিজনিত খরচ বেড়েছে। ফলে ডলারের চাহিদাও বেড়েছে।

এই অবস্থায় আমদানিতে রাশ টানতে সরকার শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাইছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

টাকার

শুল্ক বাড়ানোর প্রভাব

ইওয়াই-এর মুখ্য নীতি উপদেষ্টা এবং ষোড়শ অর্থ কমিশনের সদস্য ডি কে শ্রীবাস্তবের মতে, টাকার পতন রুখতে শুল্ক বাড়ানো কার্যকরী একটি পদক্ষেপ হতে পারে। তিনি বলেছেন, “শুল্ক বাড়ানো হলে আমদানি ব্যয় কমবে। ফলে আমদানিকারীদের কাছে ডলারের চাহিদা কমবে। চাহিদা কমলে ডলারের দামও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, আমদানি শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের কয়েকটি প্রধান লক্ষ্য পূরণ হতে পারে:

  1. মুদ্রার বিনিময় হারের নিয়ন্ত্রণ: শুল্ক বাড়লে আমদানি কমবে এবং দেশে ডলারের ব্যবহার কমবে।
  2. দেশীয় শিল্পে উৎসাহ: শুল্ক বৃদ্ধি দেশীয় পণ্যের প্রতিযোগিতার সুযোগ বাড়াবে। এর ফলে দেশীয় উৎপাদন বাড়তে পারে, যা কেন্দ্রের ‘আত্মনির্ভর ভারত’ কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  3. টাকার স্থিতিশীলতা: ডলারের চাহিদা কমার কারণে টাকার মান আরও স্থিতিশীল হতে পারে।

কী হতে পারে সরকারের পরিকল্পনা?

সরকারের হাতে মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাই বাজেটে শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে অর্থ মন্ত্রক।

তবে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কিছু ক্ষেত্রে বিতর্কেরও জন্ম দিতে পারে। কারণ, আমদানি পণ্যের দাম বাড়লে তা সরাসরি সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে তেল ও গ্যাসের মতো অপরিহার্য পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধি করলে মূল্যবৃদ্ধি হতে পারে।

স্বপ্ন পূরণে আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য

ইওয়াই-এর বিশেষজ্ঞদের মতে, আমদানি শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র ডলারের চাহিদা কমানোর জন্য নয়, বরং দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ দেওয়ার উদ্দেশ্যেও নেওয়া হতে পারে। দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানো গেলে, ভবিষ্যতে টাকার মানও আরও স্থিতিশীল হবে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ভারতের অর্থনীতিতে তার দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে, এর সঠিক প্রয়োগ এবং সাধারণ মানুষের ওপর এর প্রভাব নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে সরকারকে।

সরকারের আসন্ন বাজেট যে শুধু অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানোর জন্যই গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়। এটি দেশের ভবিষ্যৎ আর্থিক নীতি এবং আত্মনির্ভরতার দিশা দেখানোরও একটি বড় মাধ্যম হতে চলেছে। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্র কতটা কার্যকরী এবং দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়।

‘আইআইটি বাবা’: সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথে এক যুবা ইঞ্জিনিয়ারের যাত্রা

Read more

Local News