জ্বলন্ত চপ্পলে পুড়ে যাচ্ছিল পা, পোশাকেও আগুন
ঝাঁসির মহারানি লক্ষ্মীবাঈ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৫ নভেম্বর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে ওই ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যে এক নার্সের সাহসিকতার গল্প উঠে এসেছে। নার্স মেঘা জেমস, যিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুগুলিকে উদ্ধার করেছিলেন, এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর সাহসিকতার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারেনি বলে মনে করছেন হাসপাতালের কর্মকর্তারা।
মেঘা জানান, ওই রাতে তিনি একটি জরুরি ইনজেকশন আনতে হাসপাতালের বাইরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরে এসে দেখেন, অক্সিজেন সিলিন্ডারে আগুন লেগে গিয়েছে এবং দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে শিশুরা ওয়ার্ডে শুয়ে থাকলেও তাদের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। পরিস্থিতি বিবেচনায় মেঘা অবিলম্বে উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে একে একে ১৫ জন শিশুকে উদ্ধার করেন।
মেঘা বলেন, ‘‘আমি যখন ফিরে আসি, দেখি অক্সিজেন সিলিন্ডারে আগুন ধরে গেছে। দ্রুত ওয়ার্ড বয়ের সাহায্যে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি, কিন্তু আগুন ততক্ষণে অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে। আমি তখন শিশুদের উদ্ধার করতে শুরু করি। আমার চপ্পলে আগুন ধরে গিয়েছিল, পা পুড়ে যাচ্ছিল। সালোয়ারেও আগুন লাগিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু আমি পোশাক বদলে আবার কাজ চালিয়ে গেছি।’’
কিন্তু আগুনের ধোঁয়ায় পুরো হাসপাতাল ছেয়ে গিয়েছিল এবং বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজে আরও সমস্যা সৃষ্টি হয়। মেঘার ভাষায়, ‘‘আলো থাকলে আরও কয়েকজনকে বাঁচানো যেত।’’
মেঘার সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন হাসপাতালের সহকারী নার্সিং সুপার নলিনী সুদ। তিনি জানান, ‘‘মেঘা নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে ঝুঁকি নিয়ে একে একে শিশুকে উদ্ধার করেছে। আগে সে শিশুদের ঘর থেকে বার করেছে, তারপর নিজের সাহায্য চেয়েছে।’’
এনআইসিইউ (নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)-এ আগুন লেগেছিল, যেখানে সদ্যোজাত শিশুরা চিকিৎসাধীন ছিল। হাসপাতালের কর্মীরা জানলার কাচ ভেঙে শিশুদের উদ্ধার করার চেষ্টা করেন। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে এখনও চিকিৎসাধীন কিছু শিশু রয়েছে, তাদের মধ্যে এক শিশু রবিবার মারা যায়। এর ফলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১১-এ পৌঁছেছে। যদিও মেঘা নিজের কাজ চালিয়ে গেছেন, তার সাহসিকতা অনেককে বাঁচিয়েছে।
হাসপাতালে আগুন লাগার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। এই ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।