ইরানের বিরুদ্ধে ইজ়রায়েলের ‘রাইজ়িং লায়ন’
২০২৫ সালের ১৩ জুন, ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা ইরানের আকাশে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিম এশিয়ায় শুরু হয় ভয়াবহ সংঘাত। মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্রও এই সংঘর্ষে প্রবেশ করে, ইরানের ফোরডো, নাতান্জ় ও ইসফাহানের মতো তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে বোমাবর্ষণ করে। প্রশ্ন উঠছে— কেন জুন মাসেই এই অভিযান? কেবল কূটনৈতিক নয়, রয়েছে ইতিহাস আর সামরিক ব্যূহচালনারও এক গভীর খেলা।
যুদ্ধের ছক বহু পুরনো
বিশ্লেষকদের মতে, ইজ়রায়েলের এই আক্রমণ কোনো তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়। বছরের পর বছর ধরে গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও সামরিক প্রস্তুতি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এসেছে তেল আভিভ। টার্গেট কিলিং-এর মাধ্যমে নিকেশ করা হয়েছে বহু ইরানি বিজ্ঞানী ও সামরিক কমান্ডারদের। খামেনেই নেতৃত্বাধীন ইসলামিক রেভলিউশনারি গার্ড কোরের মোকাবিলা করতে এই প্রস্তুতি নেয় ইজ়রায়েল।
জুন— যুদ্ধের মাস কেন?
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, জুন মাসেই শুরু হয়েছিল অনেক বড় সামরিক সংঘর্ষ। যেমন ১৮১২ সালের জুনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেন নেপোলিয়ন, ১৯৪১ সালের জুনে হিটলার রাশিয়ার উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। ফলে এই মাসটি প্রতীকীভাবেও ‘যুদ্ধের সূচনার সময়’ হিসেবে চিহ্নিত।
কেন এত দেরি?
ইজ়রায়েল দেখেছে, গত কয়েক বছরে রাশিয়া ব্যস্ত ইউক্রেন যুদ্ধে, চিনও আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য টানাপোড়েন সামাল দিতে ব্যস্ত। ফলে ইরানের বড় দুই মিত্র কার্যত নিষ্ক্রিয়। ঠিক তখনই নেতানিয়াহু ঝুঁকি নিয়ে সামরিক পদক্ষেপে এগোন। ১৫ জুন ওমানে ইরান-আমেরিকার পরমাণু চুক্তি নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই ১৩ জুন ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’-এর মাধ্যমে ইরানকে চাপে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয় ইজ়রায়েল।
ট্রাম্পের ভূমিকা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুরুতে সরাসরি যুদ্ধে না গেলেও, ইরানকে পরমাণু চুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তেহরানের টানাপড়েন ও আলোচনা ব্যর্থ হতে শুরু করায়, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পও সামরিক পথেই হেঁটেছেন।
শিয়া প্রতিরোধ ও ভবিষ্যৎ
ইজ়রায়েল ও আমেরিকার হামলার পর ইরানও বসে নেই। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’-এর মাধ্যমে পাল্টা প্রত্যাঘাত করছে তারা। হরমুজ প্রণালীতে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে, আঞ্চলিক মিত্রদের সক্রিয় করছে এবং পরমাণু কর্মসূচি আরও জোরকদমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
এই সংঘাত পশ্চিম এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দিতে পারে, এমন আশঙ্কাই করছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল। জুনে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শেষ কোথায় গিয়ে হবে— সেই উত্তর সময়ই দেবে।
“আলোচনা না পেরে যুদ্ধ!” — আমেরিকার ইরান আক্রমণে ফের ভাইরাল ট্রাম্পের পুরনো ওবামা-আক্রমণ

