জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে
আরজি কর হাসপাতালের নার্সের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা শোনার পর জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে বিচারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে সেই আন্দোলন এখন দুই ভিন্ন সংগঠনের মধ্যে বিবাদে পরিণত হয়েছে। একদিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডাক্তার্স ফ্রন্ট’ (ডব্লিউবিজেডিএফ) আর অন্যদিকে ‘পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডাক্তার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (ডব্লিউবিজেডিএ)—এই দুই সংগঠনের মধ্যে চলছে বিরোধ।
আন্দোলনের সূচনা
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চার তলায় এক মহিলা চিকিৎসকের মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে আন্দোলন শুরু হয়। এই ঘটনায় হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি তোলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারা মূলত ১০ দফা দাবি নিয়ে কাজ শুরু করেন, যার মধ্যে নির্যাতিতার জন্য বিচার চাওয়া অন্যতম ছিল। কিন্তু এখন আন্দোলন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
আন্দোলনের প্রথম পক্ষ: ডব্লিউবিজেডিএফ
ডব্লিউবিজেডিএফ গঠন করা হয় আন্দোলনের প্রথমদিকে। তারা মূলত দাবি জানায়, আরজি করের নির্যাতিতার জন্য সঠিক বিচার এবং হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার। তাদের আন্দোলন সিবিআই তদন্তের মাধ্যমেও এগিয়ে নেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি তাদের আন্দোলন ধীরে ধীরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তারা অন্য সংগঠনের বিরুদ্ধে ‘হুমকি সংস্কৃতি’ অভিযোগ তুলেছেন এবং নতুন সংগঠনের বিরুদ্ধে ‘টাকা তোলার’ অভিযোগও করছেন।
আন্দোলনের দ্বিতীয় পক্ষ: ডব্লিউবিজেডিএ
ডব্লিউবিজেডিএ সংগঠনটি মূলত ডব্লিউবিজেডিএফ-এর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তাদের নেতাদের দাবি, তারা আন্দোলনের নামে স্বাস্থ্য সেক্টরে ‘অরাজকতা’ তৈরি করতে চাইছে। তারা আন্দোলনের প্রথম পক্ষের অভিযোগকে অসত্য দাবি করে, নিজেদের দাবি ও কর্মসূচিতে সাফাই দিয়ে আসছে।
কুস্তির ময়দান: অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ
দুই সংগঠনের মধ্যে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগের বন্যা বইছে। যেখানে এক পক্ষ অপর পক্ষকে ‘নটোরিয়াস ক্রিমিনাল’ বলছে, সেখানে অন্য পক্ষও তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলছে। আন্দোলনের মধ্যে এমন তীব্রতা আসার ফলে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য আস্তে আস্তে অন্ধকারে চলে যাচ্ছে।
বিচারের দাবি: এখন কি মূল?
জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে এতো বিভাজনের মধ্যে, নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবি কি এখন আর মুখ্য? তাদের মধ্যে একজন নেতার বক্তব্য, “আমরা প্রথম থেকেই ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে।” অন্যদিকে, নতুন সংগঠনের নেতার দাবি, “আমরা আগে থেকেই বিচার চাইছি, কিন্তু আন্দোলনকে রাজনৈতিক খেলা বানানো হচ্ছে।”
বিভাজনের প্রভাব
দুই সংগঠনের মধ্যে এই বিভাজন কতটা গভীর এবং এর প্রভাব কী হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। স্বাস্থ্য সেক্টরে যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হলে বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। ডাক্তারদের আন্দোলন যদি রাজনৈতিক রঙে রঞ্জিত হয়, তবে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্রমশ অকার্যকর হয়ে পড়বে।
তৃতীয় পক্ষের উত্থান
এই দ্বন্দ্বের মধ্যে নতুন একটি সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ জুনিয়র ডাক্তার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (পিজেডিএ) সামনে এসেছে। তাদের দাবি, তারা আসল সরকারপন্থী সংগঠন এবং তারা চিকিৎসা পরিষেবার স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায়। তাদের মধ্যে কিছু সদস্য জেডিএ-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা সরকারকে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য দায়ী করছে।
সমাপ্তি
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের এহেন অবস্থা চিকিৎসা পরিষেবার জন্য উদ্বেগজনক। দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ যদি অব্যাহত থাকে, তবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নতি এবং নির্যাতিতার জন্য সঠিক বিচারের দাবি দুর্বল হয়ে পড়বে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য দুটি সংগঠনের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার প্রয়োজন, যাতে মূল আন্দোলনের উদ্দেশ্য রক্ষা করা যায় এবং নির্যাতিতার জন্য সঠিক বিচার নিশ্চিত করা যায়। চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি ও সুরক্ষার স্বার্থে তাঁদের একসঙ্গে কাজ করা অত্যন্ত জরুরি।