জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন
জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন তিনটি আলাদা সময়সীমায় অনুষ্ঠিত হলেও, প্রতিটি আন্দোলনেই তারা নিজেদের দাবিদাওয়ার প্রতি সফলতা অর্জন করেছে। ১৯৮৩, ১৯৮৭, এবং ২০২৪—এই তিনটি আন্দোলনই বিশাল সামাজিক প্রভাব ফেলেছে, এবং রাজ্য সরকারও তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।
১৯৮৩ সালে, দ্বিতীয় বামফ্রন্ট সরকারের সময় জুনিয়র ডাক্তাররা ৬ মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালায়। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে আলোচনার পর তাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সেই দাবিগুলি কার্যকর করার ক্ষেত্রে অসন্তোষ ছিল। আবার ১৯৮৭ সালে, একই দাবিতে ৪৩ দিন কর্মবিরতি করেন ডাক্তাররা। তখনও মুখ্যমন্ত্রী বসুর সঙ্গে আলোচনা করে দাবি পূরণের লিখিত নিশ্চয়তা পেয়ে আন্দোলন তুলে নেন।
২০২৪ সালে, তৃণমূল সরকারের অধীনে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন আরোও বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমে তারা কর্মবিরতি শুরু করে এবং পরে আমরণ অনশন করে। সরকার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা করে তাদের অধিকাংশ দাবির প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়।
এই তিন আন্দোলনের মধ্যে অনেক মিল থাকা সত্ত্বেও, প্রতিটি আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ডাক্তারদের দাবি মূলত স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি নিয়ে, যা সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি। তারা জানান, জুনিয়র ডাক্তাররা হাসপাতালগুলির মূল চালিকাশক্তি। তাদের আন্দোলন সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের স্বার্থে। এ কারণে রাজ্য সরকারও তাদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
এবং সর্বদা রাজনৈতিক দলের প্রতি নিরপেক্ষ থাকা, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের সাফল্যের একটি বড় কারণ। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নেয় না, ফলে সরকারকে তাদের দাবি মানতে বাধ্য হতে হয়। এছাড়া, আন্দোলনকারীরা যে আস্থার ভিত্তিতে একত্রিত হয়ে কাজ করে, তা পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলির তুলনায় এই আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করেছে।
মোহিত রণদীপের মতে, উচ্চশিক্ষিত ও সংগঠিত অংশের দাবিকে উপেক্ষা করা সরকারের পক্ষে সহজ নয়। এ কারণে সরকারকে সচেতনভাবে আলোচনা করতে হয়।
অবশেষে, আন্দোলনের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বজায় রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান প্রজন্মের জুনিয়র ডাক্তাররা পূর্বসূরিদের আন্দোলনের কথা জানেন এবং তাদের সংগ্রামের প্রতি শ্রদ্ধা রাখেন। এভাবেই আন্দোলনগুলি পরস্পরের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে।