ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ অসম সরকারের
অসামান্য কণ্ঠে কোটি মানুষের মন জয় করা অসমের জনপ্রিয় গায়ক জ়ুবিন গার্গের মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন যেন শেষ হচ্ছে না। প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, জলেই ডুবে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। কিন্তু তাতেও সন্দেহ ঘুচল না। তাই অসম সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ফের একবার ময়নাতদন্ত করা হবে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সংবাদমাধ্যমে ঘোষণা করেন, দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্ত হবে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। তাঁর কথায়, “সমাজমাধ্যমে নানা প্রশ্ন উঠছে। অনেকেই নতুন করে ময়নাতদন্তের দাবি তুলেছেন। তাই পরিবারের অনুমতি নিয়েই এই পদক্ষেপ। আমি ব্যক্তিগতভাবে চাইনি প্রয়াত শিল্পীর শরীরে ফের ছুরি চালানো হোক। কিন্তু মানুষের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া এবং রাজনৈতিক বিতর্ক এড়ানোর জন্য এই সিদ্ধান্ত।”
উল্লেখ্য, কয়েক দিন আগেই সিঙ্গাপুরে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন জ়ুবিন। সেখানেই এক ফাঁকে স্কুবা ডাইভিং করতে যান তিনি। সেই সময়ই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগের রাতে তাঁর দলবলসহ পার্টি হয়েছিল। সেখানে মদ্যপান করেছিলেন বলেও সূত্রের দাবি। পরদিন স্কুবা ডাইভিংয়ে নামলেও তাঁর শরীরে ছিল না লাইফ জ্যাকেট। কেন এমন অবহেলা করা হল, তা নিয়েই উঠছে বড় প্রশ্ন।
আরও একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে গায়কের ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য ঘিরে। জ়ুবিন নাকি জলে নামতে ভয় পেতেন। তা সত্ত্বেও তাঁকে ডাইভিং করতে বলা হল কেন? তাঁর সঙ্গে যথেষ্ট নিরাপত্তার ব্যবস্থাও ছিল না বলে অভিযোগ। তাই তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে আরও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এই সব কারণেই প্রথম ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকেই। সাধারণ মানুষের দাবি, গায়কের মৃত্যুর আসল কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সেই চাপে পড়েই সরকার ফের ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার করে বলেছেন, “আমাদের একটাই লক্ষ্য— যাতে কোনও প্রশ্ন অমীমাংসিত না থাকে। মানুষের কাছে সত্যিটাই পৌঁছতে হবে।”
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত শেষ হওয়ার পরই সম্পন্ন হবে গায়কের শেষকৃত্য।
অসমের মানুষের কাছে জ়ুবিন শুধু একজন শিল্পী নন, ছিলেন আবেগের প্রতীক। তাঁর গান, তাঁর কণ্ঠ ঘিরে গড়ে উঠেছিল এক প্রজন্মের স্মৃতি। তাই তাঁর মৃত্যু ঘিরে এত প্রশ্ন, এত ক্ষোভ, এত অস্বস্তি— সবটাই যেন স্বাভাবিক। ভক্তদের দাবি, গায়কের অকালমৃত্যু যেন রহস্যের আড়ালে চাপা না পড়ে যায়।
এখন নজর সব গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কী উঠে আসে, সেটাই নির্ধারণ করবে বিতর্কের দিক। গায়কের পরিবার থেকে ভক্ত— সকলে চাইছেন একটাই জবাব: সত্যিই কী হয়েছিল সেদিন সিঙ্গাপুরের জলে?
সব মিলিয়ে, অসমের প্রিয় শিল্পীর মৃত্যু শুধু শোকের সীমায় আটকে নেই। এটি এখন সত্য অনুসন্ধানের লড়াই। আর সেই সত্য প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার নিজেই।
ব্যালকনির উপর উড়ালপুল! নাগপুরের সেতু স্মরণ করাচ্ছে ভোপালের ৯০ ডিগ্রি রেলসেতুর ঘটনার কথা

