Monday, December 1, 2025

জলের গভীরে হারানো পিরামিড শহর—ইয়োনাগুনির রহস্য

Share

ইয়োনাগুনির রহস্য

জাপানের ইয়োনাগুনি দ্বীপের কাছাকাছি প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে এক রহস্যময় প্রাচীন স্থাপত্যের সন্ধান পাওয়া যায়, যা দেখতে পিরামিড আকৃতির। ১৯৮৬ সালে কিশারিয়ো আরাটেক নামের এক ডুবুরির চোখে এই অবিশ্বাস্য দৃশ্য ধরা পড়ে। প্রায় ৪৫ হাজার বর্গমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই জলমগ্ন শহরের স্থাপত্য দেখতে পিরামিডের মতো হলেও তা মানুষ তৈরি না প্রকৃতির খেলা—তা নিয়ে রয়েছে নানা মতভেদ।

প্রথম আবিষ্কার ও পরবর্তী গবেষণা

আবিষ্কারের পর জাপানের রিউকিউস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাসাকি কিমুরা এই জায়গাটি নিয়ে গবেষণায় নামেন এবং দাবি করেন, এটি হারানো মহাদেশ ‘এমইউ’-র একটি অংশ হতে পারে। কিমুরার মতে, শহরটি প্রায় ১০,০০০ বছরের পুরানো। তুষার যুগের শেষে সমুদ্রের জলস্তর বাড়ায় এই শহরটি পানির নিচে চলে যায় বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। কিমুরার এই মত বিশ্বের নানা বিজ্ঞানী এবং প্রত্নতাত্ত্বিকদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।

প্রকৃতি নাকি মানব সৃষ্ট?

কিছু বিজ্ঞানী এবং প্রত্নতাত্ত্বিকের মতে, শহরের কাঠামো মানুষের তৈরি নয়। তারা বলেন, এটা প্রকৃতির নিজস্ব এক সৃষ্টি। পানির তলদেশের পাথর এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান গঠিত এই জায়গাটি দৈববলে পিরামিড আকৃতির হয়ে গেছে। ডুবুরিরা সেখানে বিভিন্ন আকারের পাথর এবং স্থাপত্যের খোঁজ পান, যার মধ্যে কিছু লিপির মতো চিহ্নও রয়েছে। যদিও এগুলোর প্রকৃত অর্থ নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি, কিছু গবেষক মনে করেন এই জায়গাটি প্রাচীন এক সভ্যতার স্মৃতি বহন করছে।

হারিয়ে যাওয়া এমইউ মহাদেশের তত্ত্ব

‘এমইউ’ নামক হারিয়ে যাওয়া মহাদেশের ধারণাটি প্রথম দেন অগাস্টাস লে প্লনজিয়ন। তিনি দাবি করেন, প্রশান্ত মহাসাগরে এক প্রাচীন মহাদেশ ছিল যেখানে লাখ লাখ মানুষ বসবাস করতেন। পরবর্তীকালে প্রবল ভূমিকম্প ও অগ্নুৎপাতের কারণে এটি সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ইয়োনাগুনির স্থাপত্যকে সেই মহাদেশের একটি অংশ মনে করেন কিমুরাসহ কিছু গবেষক।

আধুনিক অনুসন্ধান ও রহস্য উদঘাটনের প্রয়াস

১৯৯৭ সালে জাপানি শিল্পপতি ইয়াসুও ওয়াতানাবে একটি বিশেষজ্ঞ দল নিয়ে এই জায়গায় গবেষণার উদ্যোগ নেন। এই দলে ছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিক জন অ্যানাথনি ওয়েস্ট ও গ্রাহাম হ্যানকক এবং ‘ডিসকভারি’ চ্যানেলের সদস্যরা। তাদের গবেষণায় উঠে আসে, এটি প্রকৃতপক্ষে পিরামিড নয়, বরং একটি প্রাকৃতিক পাহাড় যা জলের গভীরে অবস্থান করছে। তাদের মতে, এর আকৃতি পিরামিডের মতো হলেও এটি আসলে একটি ডুবে থাকা পাহাড়।

জাপানি জনগণের বিশ্বাস ও পর্যটন

যদিও বিজ্ঞানীদের একাংশ এটিকে প্রাকৃতিক গঠন বলে মনে করেন, তবে জাপানি জনগণের মাঝে এই জায়গাটি সম্পর্কে গভীর কৌতূহল রয়েছে। তাদের বিশ্বাস, এটি প্রাচীন এক সভ্যতার নিদর্শন এবং প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে এর গুরুত্ব অপরিসীম। ফলে এই রহস্যময় শহর দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ইয়োনাগুনি দ্বীপে ভিড় জমাচ্ছেন।

এখনও পর্যন্ত, এই ডুবে থাকা শহর সম্পর্কে অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা রয়ে গেছে। এই রহস্যময় স্থানের সত্যতা আবিষ্কারের জন্য গবেষণা চলছে।

Read more

Local News