‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় মারধর ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ!
দিল্লিতে মালদহের এক পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক এবং তীব্র ক্ষোভ। অভিযোগ উঠেছে, দিল্লি পুলিশের পরিচয় দেওয়া কয়েকজন ব্যক্তি ওই পরিবারকে জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলাতে চেয়েছিলেন। তা না বলায় তাদের হেনস্থা করা হয় এবং চাওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা। এমনকি এক শিশুকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনা সামনে আসার পর রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় উঠেছে। বুধবার কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ খুলেছেন নির্যাতিত পরিবার।
পরিবারের এক সদস্য, সাজনু পারভিন জানান, তাঁরা মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ‘জয় শ্রীরাম’ বলার কথা অস্বীকার করেছিলেন। তার পর থেকেই শুরু হয় চাপ, হুমকি এবং অর্থ আদায়ের চেষ্টা। তাঁর অভিযোগ, প্রথমে চারজন পুরুষ তাঁদের বাড়িতে এসে আধার কার্ড দেখতে চান এবং তাঁর স্বামী মোক্তার খানের খোঁজ করেন। পরিচয়পত্র দেখানো সত্ত্বেও তাঁকে ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, তাঁরা যেন এলাকা না ছাড়েন।
পরের দিন আরও এক দল আসে, এ বার সঙ্গে ছিলেন দুই মহিলা। তাঁরা সাজনু এবং তাঁর সন্তানকে একটি অজানা জায়গায় নিয়ে যান বলে অভিযোগ। সেখানে তাঁদের বলা হয় ‘জয় শ্রীরাম’ বলার জন্য। সাজনু বলেন, ‘‘আমি বলি, আমি মুসলিম, আমি এটা বলতে পারব না। তখনই আমার উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় এবং আমার শিশুপুত্রকেও মারধর করা হয়। শেষে আমার কাছে ২৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়।’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার এক ভিডিও শেয়ার করে এই ঘটনার কথা তুলে ধরেছিলেন। সেখানে এক শিশুর মুখে শোনা যাচ্ছিল, তাকেও মারধর করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশ এই ভিডিওকে ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করে। পাল্টা তৃণমূল শিবির জানায়, ভিডিও একেবারেই সাজানো নয়। বরং দিল্লি পুলিশ যা সিসিটিভি ফুটেজ দেখিয়েছে, তা আংশিক, এবং যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেই জায়গার কোনও ফুটেজই প্রকাশ করা হয়নি।
বুধবার নির্যাতিত পরিবারকে কলকাতায় নিয়ে আসেন তৃণমূলের দুই সাংসদ সামিরুল ইসলাম এবং মৌসম নূর। সাংবাদিক সম্মেলনে ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও। কুণাল বলেন, “এই পরিবারটি নির্যাতনের শিকার। তাদের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলা ভাষা এবং বাঙালি পরিচয়ের জন্যই তাঁদের ‘বাংলাদেশি’ বলে অপমান করা হয়েছে।”
পরিবারটি দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে এবার আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দেবে বলেও জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার জানিয়েছেন, তিনি যে অভিযোগ করেছেন, তা নির্ভরযোগ্য এবং বাস্তব ঘটনার উপর ভিত্তি করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চেয়ে তৃণমূল চাপ তৈরি করছে।
একইসঙ্গে, বিজেপি সাংসদ সৌমেন্দু অধিকারী দিল্লির থানায় মমতার বিরুদ্ধে ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ দাখিল করেছেন। পাল্টা মমতা জানিয়েছেন, সত্যিই যদি কারও উপর অত্যাচার হয়ে থাকে, তবে তা সামনে আনা তাঁর দায়িত্ব।
এই ঘটনার পরিসমাপ্তি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এটুকু স্পষ্ট, ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোর নামে ধর্মীয় পরিচয়কে কেন্দ্র করে হেনস্থা এবং অর্থ আদায়ের অভিযোগ পরিস্থিতিকে বেশ উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
অলিম্পিক্স ক্রিকেটে বাদ পড়ার শঙ্কায় পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড, আইসিসি নিয়ম নিয়ে দুই দেশের ক্ষোভ

