Thursday, January 30, 2025

‘জয় বাংলা’ হল ‘বাংলার জয়’: সন্তোষ ট্রফি তৃণমূলের রাজনৈতিক স্লোগানের নতুন অভিজ্ঞান

Share

সন্তোষ ট্রফি

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাঙালির গৌরব ও সংস্কৃতি, অর্থাৎ ‘বাঙালি অস্মিতা’কে অস্ত্র করে বিজেপির আধিপত্য ভাঙতে সক্ষম হয়েছিল তৃণমূল। সেই সময় থেকেই ‘জয় বাংলা’ হয়ে উঠেছে তৃণমূলের রাজনৈতিক স্লোগান। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই স্লোগান ছিল প্রচারের অন্যতম মূলমন্ত্র। এ বার সন্তোষ ট্রফি জয়ের মাধ্যমে বাংলার ফুটবল দলের সাফল্যের সঙ্গে ‘জয় বাংলা’র নতুন সংযোগ তৈরি করেছে তৃণমূল, যা ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটেও প্রচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হয়ে উঠতে পারে।

সন্তোষ ট্রফি জয়: বাংলার ফুটবল ও ‘জয় বাংলা’র মিলন

বাংলার ফুটবল দল ছ’বছর পর সন্তোষ ট্রফি জিতে বাঙালির গৌরবকে উজ্জ্বল করেছে। সঞ্জয় সেনের নেতৃত্বে বাংলা দল দুর্দান্ত ফর্মে ছিল এই টুর্নামেন্টে। ফাইনালে কেরলের বিরুদ্ধে নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরিয়ে স্টপেজ টাইমে রবি হাঁসদা ও চাকু মান্ডির রুদ্ধশ্বাস গোলে ৩৩তম সন্তোষ ট্রফি জয় করে বাংলা। এই ঐতিহাসিক জয়কে কেন্দ্র করে তৃণমূলের নেতারা দলীয় স্লোগান ‘জয় বাংলা’কে তুলে ধরেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে কুণাল ঘোষ— সকলেই এই জয়কে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং তাঁদের বার্তায় ‘জয় বাংলা’ ব্যবহার করেছেন। তৃণমূলের যুব নেতা ও নেত্রীরাও এই জয়কে দলের স্লোগানের সঙ্গে মিশিয়ে নিজেদের বার্তা দিয়েছেন। কেউ কেউ দলের আরেকটি জনপ্রিয় স্লোগান ‘খেলা হবে’কেও একত্রিত করে লিখেছেন, ‘খেলা হল, জয় বাংলা।’

রাজনৈতিক বিতর্ক ও মতামত

তবে ফুটবলের সঙ্গে রাজনীতির এই সংমিশ্রণ নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। প্রাক্তন ফুটবলার ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, “বাংলার জয়ের সঙ্গে ‘জয় বাংলা’র কোনও সম্পর্ক নেই। খেলাধূলায় রাজনৈতিক স্লোগান জুড়ে দেওয়া উচিত নয়।” একই সুরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম মন্তব্য করেছেন, “জয় বাংলা আর বাংলার জয় এক নয়।” রাজ্য বিজেপি নেতা তরুণজ্যোতি তিওয়ারি এই প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে বলেছেন, “তৃণমূল সবকিছুতে রাজনীতি আনে। সন্তোষ ট্রফি জয়েও তারা সেটাই করেছে।”

অন্যদিকে, তৃণমূলের পক্ষ থেকে কুণাল ঘোষ সাফ জানিয়েছেন, “বাংলা যদি সন্তোষ ট্রফি জেতে, তাহলে আমরা ‘জয় বাংলা’ বলব। এতে কারও সমস্যা হলে সেটা তাঁদের ব্যাপার। আমাদের কিছু যায় আসে না।” তৃণমূলের এক তরুণ নেতা বলেন, “বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয় তৃণমূলের স্লোগানকে আরও জনপ্রিয় করে তুলেছে। সেই সুযোগই আমরা কাজে লাগিয়েছি।”

ইতিহাসে ফুটবল ও রাজনীতি

ফুটবলের সঙ্গে রাজনীতির যোগ নতুন কিছু নয়। ১৯১১ সালে মোহনবাগান যখন আইএফএ শিল্ডে ব্রিটিশ ক্লাব ইস্ট ইয়র্কশায়ারকে হারিয়েছিল, তখন তা ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। একই ভাবে, আন্তর্জাতিক ফুটবলে রাজনৈতিক বার্তার উদাহরণ রয়েছে বহু। ২০১৯ সালে, এনআরসি ও সিএএ বিরোধিতায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারিতে ‘রক্ত দিয়ে কেনা মাটি, কাগজ দিয়ে নয়’ লেখা ব্যানার ঝুলেছিল।

ইতালির লিভরনো ক্লাবও এক সময় কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। সিরি এ-তে খেলা এই ক্লাবের গ্যালারিতে এখনও কাস্তে-হাতুড়ি আঁকা পতাকা দেখা যায়।

তৃণমূলের নির্বাচনী কৌশল

২০২১ সালে বিজেপির ‘মেরুকরণ’ নীতির বিরুদ্ধে বাঙালি গৌরবকে সামনে রেখে সাফল্য পেয়েছিল তৃণমূল। ‘জয় বাংলা’ স্লোগান সেই সময় থেকে দলের এক প্রতীকী বার্তা হয়ে উঠেছে। এ বার সন্তোষ ট্রফি জয়ের সঙ্গে এই স্লোগানকে আরও প্রসারিত করেছে তৃণমূল, যা থেকে স্পষ্ট যে, ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটেও বাঙালি অস্মিতাই হবে তাদের মূল অস্ত্র।

উপসংহার

সন্তোষ ট্রফি জয়ের মতো ক্রীড়াসফলতাকে রাজনৈতিক স্লোগানের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, তৃণমূল এই সুযোগকে ব্যবহার করতে পিছপা হয়নি। ‘জয় বাংলা’ এখন কেবল রাজনৈতিক স্লোগান নয়, এটি বাংলার গর্ব এবং অস্মিতার প্রতীক হিসেবেও জায়গা করে নিয়েছে।

Read more

Local News