জয়শঙ্করের মন্তব্যে ক্ষুব্ধ ইসলামাবাদ!
ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শনিবার এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ঘিরে রবিবারই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল ইসলামাবাদ। পাক বিদেশ দফতর একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে জয়শঙ্করের মন্তব্যকে ‘‘উস্কানিমূলক, দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’’ বলে চিহ্নিত করেছে। পাশাপাশি, গত মে মাসের ‘অপারেশন সিঁদুর’ এবং সেই সময়কার ভারত-পাক সংঘর্ষের ঘটনাকেও সামনে এনে নিজেদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করেছে তারা।
পাক বিদেশ দফতরের মুখপাত্র তাহির আন্দ্রাবি বলেন, ‘‘পাকিস্তান একটি দায়িত্ববান রাষ্ট্র। দেশের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার জন্য আমাদের সামরিক বাহিনী ও সমস্ত প্রতিষ্ঠান দৃঢ়ভাবে দায়বদ্ধ।’’ তিনি আরও যোগ করেন, সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সময় পাকিস্তানের সৈন্যরা যে পেশাদারিত্ব, দেশপ্রেম এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষার যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, তা কোনও মতেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। সেই কারণেই নয়াদিল্লির অভিযোগকে ইসলামাবাদ ‘রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াস’ বলেই ব্যাখ্যা করেছে।
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়েছে— ভারত ইচ্ছাকৃত ভাবে পাকিস্তানের সামরিক প্রতিষ্ঠানকে আক্রমণ করছে, যাতে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংকট ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে দেশবাসীর নজর সরানো যায়। পাকিস্তানের অভিযোগ, ভারত পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ উসকে দেয় এবং সেই বিষয়টি আড়াল করতেই এই ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে। ইসলামাবাদের মতে, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বের এই বক্তব্য শুধু প্রতিবেশী দেশের প্রতি অসম্মান নয়, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক সংকেত।
পাক মুখপাত্র আরও মন্তব্য করেন, ‘‘ভারতে সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মীয় আগ্রাসন ক্রমশ বাড়ছে। সে দিকে নজর দেওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তানের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে দায়ী করা বাস্তব পরিস্থিতিকে আড়াল করার কৌশল মাত্র।’’
অন্য দিকে, জয়শঙ্কর শনিবারের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘ভারতের যত নিরাপত্তা সঙ্কট রয়েছে, তার অধিকাংশের জন্য দায়ী পাকিস্তান ও তাদের সামরিক প্রতিষ্ঠান।’’ তাঁর অভিযোগ— বহু সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীকে প্রশ্রয়, অর্থ এবং লজিস্টিক সাহায্য দেয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ‘‘যেমন ভাল এবং খারাপ জঙ্গিদের মধ্যে কেউ কেউ বিভাজন তৈরি করেন, তেমনই ভাল সামরিক নেতা এবং খারাপ সামরিক নেতাদের মধ্যেও পার্থক্য করা প্রয়োজন।’’
জয়শঙ্করের এই জবাবি যুক্তিকে ইসলামাবাদ একেবারেই মানতে রাজি নয়। তাদের মতে, এটি নিছকই আঞ্চলিক রাজনীতির চাপ বাড়ানোর পদক্ষেপ। পাকিস্তান জানায়, ‘‘ভারত যদি সত্যিই স্থিতিশীলতা চায়, তবে উসকানিমূলক মন্তব্য না করে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।’’
ভারত-পাক সম্পর্ক বহু দশক ধরেই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলেছে। সীমান্ত সংঘর্ষ, সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গ থেকে শুরু করে কূটনৈতিক অভিযোগ— দুই দেশের কথোপকথনে উভয় পক্ষই কোনও না কোনও ভাবে একে অপরকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করে এসেছে। জয়শঙ্করের বক্তব্য এবং তার জবাবে পাকিস্তানের বিবৃতি— এই দীর্ঘ রাজনৈতিক উত্তেজনারই সর্বশেষ অধ্যায় হিসেবে ধরা হচ্ছে।
পরিস্থিতি কতখানি জটিলতায় পৌঁছয় এবং এ নিয়ে দিল্লি আরও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায় কি না, তা এখন নজরে সমস্ত কূটনৈতিক মহলের।

