Sunday, February 23, 2025

জন্ম রাশিয়ায়, উচ্চতা সাত ফুট, ভক্তদের কাছে তিনি পরশুরাম! মহাকুম্ভে আলোচনায় ‘মাসকুলার বাবা’

Share

মহাকুম্ভে আলোচনায় ‘মাসকুলার বাবা’

উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হওয়া মহাকুম্ভ মেলায় এই বছর এক অভূতপূর্ব চমক দেখা গেছে। ১২ বছর অন্তর আয়োজিত এই মহাপুণ্যতীর্থে লাখ লাখ ভক্তের সমাগম হয়। তবে এবার ভক্তদের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন একজন বিশেষ সাধু—’মাসকুলার বাবা’। সাত ফুট লম্বা, সুঠাম চেহারার এই সাধু শুধু তাঁর দৈহিক গঠনের জন্য নয়, বরং তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের অসাধারণ যাত্রাপথের জন্যও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছেন।

কে এই মাসকুলার বাবা?

‘মাসকুলার বাবা’ নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই সাধুর প্রকৃত পরিচয় আরও চমকপ্রদ। তাঁর আসল নাম বাবা আত্মাপ্রেম গিরি। যদিও তিনি ভারতীয় নাম ব্যবহার করেন, তাঁর জন্ম রাশিয়ায়। প্রায় তিন দশক আগে আধ্যাত্মিকতার টানে তিনি তাঁর মাতৃভূমি রাশিয়া ছেড়ে ভারত এবং পরে নেপালে চলে আসেন। আধ্যাত্মিক গুরু ‘পাইলট বাবা’ ওরফে সোমনাথ গিরির শিষ্য হিসেবে তিনি দীক্ষা নেন এবং জুনা আখড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে সাধনার পথ বেছে নেন।

আধ্যাত্মিকতা থেকে শুরু করে শরীরচর্চা—এক অনন্য ব্যক্তিত্ব

‘মাসকুলার বাবা’ শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য নয়, তাঁর শরীরচর্চার প্রতি অদম্য আগ্রহের জন্যও বিখ্যাত। দিন শুরু করেন দীর্ঘ সময় ধরে ধ্যান এবং যোগাভ্যাস দিয়ে। পাশাপাশি তাঁর সুঠাম দেহ বজায় রাখতে জিমের মতো কঠোর শরীরচর্চা করেন। তাঁকে দেখে ভক্তদের একাংশ দাবি করেছেন, তিনি ভগবান বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরামের আধুনিক রূপ। তাঁর দৈহিক গঠন, চওড়া কপাল, বুক-ছোঁয়া দাড়ি এবং গভীর সবুজ চোখের চাহনি তাঁকে যেন এক পৌরাণিক চরিত্রের মতো করে তুলেছে।

মহাকুম্ভে আগমন এবং নজর কাড়া উপস্থিতি

মহাকুম্ভ মেলায় গঙ্গা, যমুনা এবং অন্তঃসলিলা সরস্বতীর সঙ্গমস্থলে পুণ্যস্নানের উদ্দেশ্যে ভক্তদের ভিড়ের মধ্যে এই সাধুর উপস্থিতি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গেরুয়া বসনে, রুদ্রাক্ষের মালায় সজ্জিত সাত ফুট উচ্চতার এই দীর্ঘদেহী সাধু মহাকুম্ভের ভিড়ে এক আলাদা আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি তাঁর বেশ কিছু ছবি প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে দেখা গেছে তাঁকে হাসিমুখে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে।

পেশা থেকে আধ্যাত্মিকতার পথে

‘মাসকুলার বাবা’ সাধু হওয়ার আগে রাশিয়ায় শিক্ষকতা করতেন। তবে সনাতন ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতার প্রতি গভীর আগ্রহের কারণে তিনি তাঁর পরিচিত জীবন ছেড়ে ভারতবর্ষে চলে আসেন। ধীরে ধীরে তিনি সনাতন ধর্মের গভীরতাকে উপলব্ধি করেন এবং আধ্যাত্মিক চর্চায় নিজেকে নিবেদিত করেন।

ভক্তদের দাবি: তিনি আধুনিক পরশুরাম

ভক্তরা তাঁকে একদিকে আধ্যাত্মিক গুরু হিসেবে মানেন, আবার অনেকেই তাঁকে ভগবান পরশুরামের আধুনিক রূপ বলে কল্পনা করেন। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, পরশুরাম ছিলেন একাধারে অসাধারণ পেশিবহুল এবং ধার্মিক। ‘মাসকুলার বাবা’র চেহারা, আচরণ এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান তাঁকে সেই প্রাচীন চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয় করে তুলেছে।

সমাজমাধ্যমে আলোড়ন

মহাকুম্ভে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে যেমন ভক্তরা মুগ্ধ, তেমনই সমাজমাধ্যমেও তাঁকে নিয়ে চর্চার শেষ নেই। কেউ কেউ তাঁকে হিরো মনে করছেন, আবার কেউ তাঁকে নিয়ে মজার মিম তৈরি করছেন। তবে এক বিষয়ে সবারই একমত—তাঁর চেহারা ও ব্যক্তিত্ব তাঁকে সকলের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

মহাকুম্ভে আরও কিছু অদ্ভুত সাধু

‘মাসকুলার বাবা’র পাশাপাশি মহাকুম্ভে অন্যান্য অনন্য সাধুরাও ভক্তদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যেমন ‘আইআইটি বাবা’, যিনি এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ স্নাতকোত্তর করে আধ্যাত্মিকতার পথে এসেছেন। এইসব সাধুরা প্রমাণ করছেন, আধ্যাত্মিকতার জগতে প্রবেশ করার জন্য শুধুমাত্র ধর্মীয় আবেগ নয়, বরং এক গভীর অন্বেষণও প্রয়োজন।

শেষ কথা

‘মাসকুলার বাবা’ শুধু একজন সাধু নন, তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি, যাঁর জীবনের গল্প আধ্যাত্মিকতা এবং শারীরিক দৃঢ়তার এক অপূর্ব সমন্বয়। মহাকুম্ভের মতো পবিত্র মঞ্চে তাঁর উপস্থিতি শুধু ভক্তদের নয়, গোটা সমাজের মনেও গভীর প্রভাব ফেলেছে। তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব প্রমাণ করেন যে, আধ্যাত্মিকতা এবং ব্যক্তিগত শৃঙ্খলার সমন্বয় মানুষকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম ভূমিকম্প! পলকে ধ্বংস শহর, মুছে গেল আট লক্ষ প্রাণ

Read more

Local News