Saturday, February 22, 2025

জন্মহার বাড়াতে রাশিয়ায় যৌন মন্ত্রকের পরিকল্পনা: পুতিনের নতুন পদক্ষেপ

Share

জন্মহার বাড়াতে রাশিয়ায় যৌন মন্ত্রকের পরিকল্পনা

রাশিয়ায় জন্মহার হ্রাস পাওয়ায় উদ্বিগ্ন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। সন্তানধারণে তরুণ-তরুণীদের অনীহা এবং চলমান ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে জনসংখ্যার ঘাটতি পুষিয়ে তুলতে এবার তিনি নতুন মন্ত্রক গঠনের পরিকল্পনা করছেন। এই বিশেষ মন্ত্রকের দায়িত্ব হবে দেশের যুবক-যুবতীদের সন্তান উৎপাদনে উৎসাহিত করা।

যুদ্ধ ও মহামারির ধাক্কায় সংকটে রাশিয়ার জনসংখ্যা

২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে বহু রুশ সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর আগে, করোনা মহামারির আঘাতেও বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, যা জনসংখ্যায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, রাশিয়ার তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ সন্তানধারণে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এটি দেশের ভবিষ্যৎ জনসংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা রাশিয়ার প্রশাসনকে চিন্তিত করে তুলেছে।

প্রণোদনার মাধ্যমে জন্মহার বাড়ানোর প্রচেষ্টা

জনসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পুতিন সরকার আগেই বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২২ সালে তিনি ঘোষণা করেছিলেন, যেসব মা দশটি সন্তানের জন্ম দেবেন, তাঁদের ১০ লক্ষ রুবল (প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা) পুরস্কার দেওয়া হবে। কিন্তু এই উদ্যোগও খুব বেশি সফল হয়নি। শুধু পুরস্কার অর্থ দিয়ে জন্মহার বাড়ানো সম্ভব নয়, এটা বুঝতে পেরেছে রুশ প্রশাসন।

আলো ও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার উদ্যোগ

পুতিন প্রশাসন তখন নতুন কৌশল হিসেবে একটি ব্যবস্থা চালু করেছিল, যেখানে রাত ১০টা থেকে ভোর ২টা পর্যন্ত আলো এবং ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। সরকারের যুক্তি ছিল, তরুণ-তরুণীরা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকছেন, যা তাঁদের সন্তানধারণের আকাঙ্ক্ষা কমিয়ে দিচ্ছে। তবে এই পদ্ধতিও কার্যকর হয়নি এবং তা শিগগিরই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

কর্মক্ষেত্রে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সঙ্গমের পরামর্শ

এ বছর সেপ্টেম্বরে পুতিন ঘোষণা করেন যে, কর্মক্ষেত্রে মধ্যাহ্নভোজ বা কফি বিরতির ফাঁকে সঙ্গমের জন্য সময় বের করতে পারেন তরুণ-তরুণীরা। প্রেসিডেন্টের এমন পরামর্শে দেশ-বিদেশে বেশ সাড়া পড়ে যায়। এমনকি রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েভজেনি শেস্তোপলোভও এই উদ্যোগকে সমর্থন করে বলেন, কর্মজীবী তরুণ-তরুণীদের অধিক সন্তান জন্ম দিতে উৎসাহিত করা উচিত।

নতুন মন্ত্রকের কাজ ও দায়িত্ব

রাশিয়ায় বর্তমানে মহিলাদের গড় প্রজনন হার ১.৫, যা স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত নয়। এই হার ২.১-এ উন্নীত করাই নতুন মন্ত্রকের প্রধান লক্ষ্য হবে। রাশিয়ার সরকার আশা করছে, নতুন এই মন্ত্রক তরুণ-তরুণীদের মধ্যে সন্তানধারণে আগ্রহ বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।

এই মন্ত্রকটির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা শিশু লালন-পালনে আর্থিক সাহায্যসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের পরিকল্পনা করছেন। গর্ভধারণে উৎসাহিত করতে বিনামূল্যে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে এবং নতুন মন্ত্রক থেকে সন্তান ধারণের জন্য প্রণোদনা দেওয়া হবে। এমনকি গর্ভপাত নিষিদ্ধ করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

এলাকাভিত্তিক প্রণোদনা কর্মসূচি

ইতিমধ্যে রাশিয়ার কিছু অঞ্চলে সন্তানধারণের জন্য দম্পতিদের অর্থ সাহায্য প্রদান শুরু হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, খবরভস্ক অঞ্চলে ১৮ থেকে ২৩ বছর বয়সী মায়েদের সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য নগদ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া চেলিয়াবিনস্ক অঞ্চলে ২৪ বছরের কম বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দিলে ৮,৫০০ পাউন্ড পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে, যা আগামী ডিসেম্বরে আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।

বিদেশি প্রভাব ও সমালোচনা

এদিকে রাশিয়ার এই উদ্যোগ পশ্চিমা দেশগুলোতে সমালোচনার শিকার হয়েছে। কিছু মানুষ মনে করছেন, জন্মহার বাড়াতে রাশিয়ার নতুন এই যৌন মন্ত্রকের পরিকল্পনা সমাজে অযাচিত প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই একটি পিটিশনও দাখিল করা হয়েছে।

বিদেশের অনুসরণ

রাশিয়ার মতো জন্মহারের সমস্যায় ভুগছে দক্ষিণ ইউরোপের দেশ ইতালিও। সেখানে সন্তান উৎপাদনে তরুণ-তরুণীদের উৎসাহিত করতে সরকার বাড়ি এবং নগদ অর্থ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

রাশিয়ার জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের জন্য পুতিনের এই নতুন উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, সেটি এখন সময়ের অপেক্ষা। তবে নতুন এই মন্ত্রক এবং এর অধীনে গৃহীত উদ্যোগ যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে হয়তো রাশিয়া তাদের জনসংখ্যা হ্রাসের সমস্যার একটি সমাধান খুঁজে পাবে।

Read more

Local News