জঙ্গলে কুঠার, পাহাড়ে বিস্ফোরণ!
দুই সাগরের মাঝে বিশাল এক শর্টকাটের খোঁজে নামছে চিন। মালয় উপদ্বীপের বুক চিরে আন্দামান সাগর ও থাই উপসাগরকে জুড়তে চায় বেজিং। এই খাল যদি বাস্তবে রূপ পায়, তাহলে মালাক্কা প্রণালী ঘুরে সমুদ্রপথে যে দীর্ঘ যাত্রা, তা অনেকটাই ছোট হয়ে যাবে। সময় কমবে, খরচও বাঁচবে। একদিকে যেমন এই খাল হতে পারে সমুদ্রবাণিজ্যের ‘গেমচেঞ্জার’, অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে—এতে ভারতের লাভ, না কি বিপদ?
এই পরিকল্পনার নাম ‘তাই খাল’ বা ‘ক্রা খাল’। খালটি কাটলে আন্দামান সাগর থেকে কোনও জাহাজকে আর মালাক্কা প্রণালী ঘুরে থাই উপসাগরে যেতে হবে না। সিঙ্গাপুর থেকে বঙ্গোপসাগরের দূরত্ব অন্তত ১২০০ কিমি কমে যাবে, যা সময় ও জ্বালানির দিক দিয়ে বিশাল সাশ্রয়।
তবে এই পরিকল্পনার জন্ম কিন্তু আজকের নয়। ১৬৭৭ সালে থাই রাজা নারাই প্রথম এই প্রকল্পের কথা ভাবেন। ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার লা লামার সেই সময় জরিপও করেন, কিন্তু মালয় উপদ্বীপের ঘন জঙ্গল ও দুর্গম পাহাড়ের কারণে কাজ থমকে যায়। এরপর ব্রিটিশরাও চেষ্টা করেছে, কিন্তু প্রকৃতির বাধায় থেমে গেছে সবকিছু।
এবারের চেষ্টায় নেতৃত্বে বেজিং। ‘স্ট্রিং অফ পার্লস’ নামে চিন যে সামুদ্রিক রেশমপথ তৈরি করছে, সেই কৌশলেরই অংশ ভাবা হচ্ছে এই খালটিকে। প্রস্তাবিত তাই খালের দৈর্ঘ্য হবে ১২৮ কিমি, প্রস্থ ৪০০ মিটার এবং গভীরতা ৩০ মিটার। অর্থাৎ, আকারে এটি হবে পানামা ও সুয়েজ খালের সমতুল্য। তবে খাল কাটতে গিয়ে যে বিপুল পরিমাণ মাটি উঠবে, তা রাখার জায়গা খুঁজতে হতে পারে আস্ত একটা দ্বীপ!
চিন্তায় পরিবেশবিদরা। কারণ, মালয় উপদ্বীপে রয়েছে প্রচুর বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য। খাল কাটার ফলে ধ্বংস হবে জঙ্গল, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাস্তুতন্ত্র। এছাড়াও তাইল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে খাল কাটা মানে দেশের অভ্যন্তরে এক ধরনের কৃত্রিম সীমান্ত তৈরি। যা আইনি এবং রাজনৈতিক দিক থেকেও জটিল।
এর মধ্যেই একটি কমিটি গঠন করেছে থাই সরকার—‘তাই ক্যানাল অ্যাসোসিয়েশন ফর স্টাডি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’। তারা বলছে, প্রকল্পটি শুরু হলে ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু এই খাল কাটার দায়িত্ব সত্যিই চিনকে দেওয়া হবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গেই চিনের সম্পর্ক উত্তপ্ত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বেজিং বহুদিন ধরেই মালাক্কা প্রণালীকে এড়াতে চায়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে সেই পথ বন্ধ করে দেয়, তবে চিনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই বিকল্প রাস্তা হিসাবে তাই খালকে বেছে নিতে চাইছে শি জিনপিংয়ের সরকার।
ভারতের জন্য এতে যেমন সুবিধা আছে—নতুন সমুদ্রপথে জাহাজ চলাচল সহজ হবে, তেমনি চিনা নৌবাহিনী যদি এই রাস্তায় সক্রিয় হয়, তবে আন্দামান এলাকায় ভারতের কৌশলগত চাপও বাড়বে। ফলে এই খাল কাটা শুধু একটি প্রকৌশল প্রকল্প নয়, বরং আগামী দিনের ভূরাজনীতির বড় এক চালচিত্র হতে চলেছে।
তালা ভাঙার পাল্টা তালা! কসবা থেকে হুগলি—চাকরিহারাদের ক্ষোভে কাঁপছে রাজ্য