Monday, December 1, 2025

“জগন্নাথধাম শুধু পুরী— অন্য কোথাও কল্পনা অনুচিত”: দিঘা মন্দির নিয়ে মুখ খুললেন শঙ্করাচার্য

Share

জগন্নাথধাম শুধু পুরী— অন্য কোথাও কল্পনা অনুচিত

দিঘায় নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দিরকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কে এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করলেন পুরীর গোবর্ধন মঠের শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। রবিবার বিকেলে গোবর্ধন মঠের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে শঙ্করাচার্যের নামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়, যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে— “শ্রীজগন্নাথপুরী হল শ্রীজগন্নাথ ধাম। এই ঐতিহাসিক তথ্যের অন্যত্র কল্পনা সর্বৈব অনুচিত।”

যদিও সেই পোস্টে দিঘার নাম কোথাও উল্লেখ করা হয়নি, তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাতে ট্যাগ করা হয়েছে— যা রাজনৈতিক বার্তাও বহন করছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

দিঘার জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধন হয়েছিল গত অক্ষয় তৃতীয়ায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে। পুরীর মন্দিরের কয়েকজন সেবায়েত এবং ইসকনের সন্ন্যাসীদের উপস্থিতিতে সেখানে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়। সেই মন্দিরকে ‘জগন্নাথধাম’ নামে অভিহিত করা নিয়েই তৈরি হয়েছে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু।

বিতর্কের সূত্রপাত নিমকাঠ নিয়ে। অভিযোগ ওঠে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে নবকলেবর পর্বে ব্যবহৃত অতিরিক্ত নিমকাঠ দিঘায় এনে মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। ওড়িশার বিজেপি সরকার এই অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। রাজ্যের আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দ্রন নির্দেশ দেন, তদন্ত করে দেখা হোক পুরী মন্দির প্রশাসন থেকে আদৌ কাঠ পাঠানো হয়েছে কি না। পরে মন্দির প্রশাসন জানিয়ে দেয়, মন্দির থেকে কোনও কাঠ বাইরে পাঠানো হয়নি। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে ওড়িশার মন্ত্রী নিমকাঠ বিতর্কে ইতি টানলেও, ‘ধাম’ শব্দ ব্যবহারের বিষয়ে আপত্তি তোলেন তিনি। বলেন, “জগন্নাথধাম শুধুই পুরী। অন্যত্র ওই নাম ব্যবহার বহু মানুষের আবেগে আঘাত।”

এখানেই শেষ নয়। রাজ্যের বিজেপি নেতারা দিঘার অনুষ্ঠান বয়কট করেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আমন্ত্রণ পেয়েও যাননি। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আগেই জানান, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকার। তবে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন, যা নিয়ে দলের অন্দরেই বিতর্ক শুরু হয়।

এই পরিস্থিতিতে শঙ্করাচার্যের বিবৃতি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ, গোবর্ধন মঠ পূর্ব ভারতের চারধাম পীঠের মধ্যে অন্যতম। চার শঙ্করাচার্যের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ হচ্ছেন স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী, যাঁর কথা ধর্মীয় মহলে অত্যন্ত গুরুত্ব পায়।

তাঁর মতে, “শ্রীজগন্নাথধাম” শব্দটি শুধুমাত্র পুরীর জন্যই প্রযোজ্য। অন্য কোথাও তা প্রয়োগ করা ঐতিহাসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে সঠিক নয়। যদিও সরাসরি দিঘার প্রসঙ্গ না তুলেই, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে এই মন্তব্য করা— রাজনীতির মঞ্চে একরকম কৌশল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তবে শঙ্করাচার্যের বিবৃতিতে বিতর্ক থামবে, না আরও ঘনীভূত হবে— এখন সেটাই দেখার। কারণ ধর্মীয় আবেগ এবং রাজনীতির মিশ্রণে এই ইস্যু এখন আর নিছক এক মন্দির উদ্বোধনের সীমায় নেই। এটা হয়ে উঠেছে সম্মান, বিশ্বাস আর রাজনৈতিক অবস্থানের এক সূক্ষ্ম টানাপড়েন।

সাইবার অপরাধ সচেতনতা: ছাত্রদের জন্য ‘সহজ পাঠ’ প্রশিক্ষণ

Read more

Local News