চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে সঞ্জু নেই!
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ভারতীয় ক্রিকেট দল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে শুরু হয়েছে বিতর্ক। অন্যতম প্রতিভাবান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান সঞ্জু স্যামসনের দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে উত্তাল ক্রিকেটমহল। কেউ বলছেন, কোচ গৌতম গম্ভীর সঞ্জুকে দলে রাখতে চাইলেও নির্বাচক অজিত আগরকর এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মা তাঁকে চায়নি। তাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন ঋষভ পন্থ। আবার কেউ দাবি করছেন, সঞ্জু বিজয় হজারে ট্রফির প্রস্তুতিমূলক ক্যাম্পে যোগ না দেওয়ার কারণেই বাদ পড়েছেন।
তবে সবচেয়ে জোরালো প্রতিক্রিয়া এসেছে সঞ্জুর বাবা বিশ্বনাথ স্যামসনের কাছ থেকে। তিনি সোজাসুজি দোষারোপ করেছেন কেরল ক্রিকেট সংস্থার (কেসিএ) কর্তাদের। তাঁর মতে, কিছু অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং পক্ষপাতিত্বের কারণেই তাঁর ছেলে জাতীয় দলে সুযোগ পাচ্ছে না।
কেন বাদ পড়লেন সঞ্জু?
সঞ্জুর বাবা বিশ্বনাথ অভিযোগ করেছেন, কেরল ক্রিকেট সংস্থার কিছু কর্তা ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে সঞ্জুকে নিয়ে নানা বাধা তৈরি করছেন। তিনি বলেন, “কেরল ক্রিকেট সংস্থার শীর্ষ কর্তারা, যেমন সভাপতি জয়েশ জর্জ বা সচিব বিনোদ কুমার, সঞ্জুর ব্যাপারে ন্যায়সঙ্গত। কিন্তু কিছু লোক সব কিছু বিষাক্ত করে তুলছে। এর আগেও কেসিএ নিয়ে আমি মুখ খুলিনি। কিন্তু এবার যা ঘটল, তা সত্যিই বড় অন্যায়। আমার ছেলে ক্যাম্পে যায়নি বলে তাকে দলে নেওয়া হয়নি, অথচ অন্যদের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।”
বিশ্বনাথ আরও বলেন, “আমরা খেলা নিয়ে রাজনীতি বা ব্যবসা করতে চাই না। শুধু চাই, সঞ্জুকে যোগ্যতার ভিত্তিতে বিচার করা হোক। যদি কোনও ভুল করে থাকে, তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু এভাবে একতরফা দোষারোপ মেনে নেওয়া যায় না।”
ঘরোয়া ক্রিকেট এবং সঞ্জুর পরিস্থিতি
সঞ্জু স্যামসন কেরল দলের হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করেছেন। সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে কেরল দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। কিন্তু বিজয় হজারে ট্রফির প্রস্তুতিমূলক ক্যাম্পে তিনি যোগ না দেওয়ায় তাঁকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ।
কেরলের ক্যাম্পে না গেলেও, সঞ্জুর ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন তোলা কঠিন। ধারাবাহিক ভাবে রান করা সত্ত্বেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে তাঁর জায়গা হয়নি। এর বদলে উইকেটরক্ষক হিসেবে দলে রাখা হয়েছে লোকেশ রাহুল এবং ঋষভ পন্থকে। সঞ্জুর বাবা মনে করছেন, এই পুরো ঘটনার পেছনে রয়েছে কেরল ক্রিকেট সংস্থার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।
সঞ্জুর ভবিষ্যৎ
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে সুযোগ না পেলেও, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজে সঞ্জুকে দলে রাখা হয়েছে। ২২ জানুয়ারি ইডেন গার্ডেন্সে শুরু হতে চলা এই সিরিজে সঞ্জুর খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করলে তিনি নির্বাচকদের ওপর চাপ বাড়াতে পারেন। তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে বদল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
বিশ্বনাথ বলেন, “আমার ছেলে ভালো খেলে নিজেকে প্রমাণ করবে। শুধু চাই, তাকে সুযোগ দেওয়া হোক। এমন নয় যে ওকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নিয়েই নিতে হবে। কিন্তু যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যদি রাজনীতি করে ওকে বাইরে রাখা হয়, তা মেনে নেওয়া কঠিন।”
বিতর্কের কেন্দ্রে নির্বাচক এবং কোচ
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল নির্বাচন নিয়ে আরও একটি তত্ত্ব ঘুরছে। শোনা যাচ্ছে, কোচ গৌতম গম্ভীর সঞ্জুকে দলে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচক অজিত আগরকর এবং অধিনায়ক রোহিত শর্মা ঋষভ পন্থকে তাঁদের পছন্দের তালিকায় রেখেছিলেন। সঞ্জু এবং পন্থের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা নতুন নয়, তবে এই ঘটনায় সেই বিতর্ক আরও উস্কে দিয়েছে।
শেষ কথা
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে জায়গা না পাওয়ায় সঞ্জু স্যামসনের ভক্ত এবং সমর্থকরা হতাশ। বাবা বিশ্বনাথ স্যামসনের অভিযোগ এই বিতর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। তবে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সঞ্জুর পারফরম্যান্স তাঁর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। দল নির্বাচন এবং অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, শেষ পর্যন্ত সঞ্জুর জন্য ব্যাট বলেই সব উত্তর দিতে হবে।
সঞ্জয় রায়ের শাস্তি, পুলিশের গাফিলতি এবং আরজি কর হাসপাতালের দায়: বিচারকের পর্যবেক্ষণ