চিন বাদে সব দেশের উপর শুল্কনীতি স্থগিত!
বিশ্ববাণিজ্যের মাঠে হঠাৎ খানিকটা থামলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে থামা মানেই সবাইকে ছাড় নয়—চিনের জন্য বরাদ্দ একেবারে ভিন্ন ছক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়ে দিলেন, আমেরিকার নতুন শুল্কনীতি আপাতত ৯০ দিনের জন্য স্থগিত থাকবে। কিন্তু এই ছুট ছুট খেলায় চিনের জন্য নেই কোনো বিশ্রাম—বরং তার উপর চাপানো হয়েছে ১২৫ শতাংশ শুল্ক।
গত কিছুদিন ধরে ‘পারস্পরিক শুল্ক’ চালুর কথা ঘোষণা করে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন ট্রাম্প। ভারতের মতো বন্ধু দেশ থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইজরায়েল—সবাই ছিলেন এই ঘোষণার আওতায়। কিন্তু এর জেরে বিশ্বজুড়ে যেমন উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তেমনই আমেরিকার অভ্যন্তরেও ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে।
ট্রাম্পের এই শুল্কনীতির বিরুদ্ধে সরব হন মার্কিন নাগরিকরাও। নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামেন বিক্ষোভে। শেয়ার বাজারে নেমে আসে টালমাটাল পরিস্থিতি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছড়ায় উদ্বেগ। বাজারে দ্রব্যের দাম বাড়ার আশঙ্কাও ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছিল।
এই চাপের মুখেই হয়তো কিছুটা পিছু হটলেন ট্রাম্প। চিন বাদে বাকি দেশের জন্য নতুন শুল্কনীতি স্থগিত রাখার ঘোষণা আসে। তবে এখনই সরাসরি কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি হোয়াইট হাউস। যদিও ‘দ্য গার্ডিয়ান’ সূত্রে জানা গেছে, এই ঘোষণার পরই বিশ্ববাজারে কিছুটা স্বস্তির হাওয়া বয়ে যায়। ‘এস অ্যান্ড পি ৫০০’ এবং ‘ন্যাসড্যাক’ সূচকে দেখা যায় ৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি।
তবে চিনের জন্য গল্পটা একেবারেই আলাদা। চলতি বছরেই মার্কিন প্রশাসন প্রথম চিনা পণ্যের উপর ২০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিল। এরপর একাধিক দফায় তা বেড়ে হয় ১০৪ শতাংশ। পাল্টা শুল্ক চাপিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিল বেজিংও। কিন্তু এবার ট্রাম্প আরও এক ধাপ এগিয়ে চিনা পণ্যের উপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে জানিয়ে দিলেন, “চিন বিশ্ববাজারে সম্মান দেখায়নি, তাই এই শাস্তি।”
তবে বাকিদের জন্য কিছুটা দম ফেলার সুযোগ রেখেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মেক্সিকো, কানাডা-সহ বহু দেশের উপর এখনো ১০ শতাংশ প্রাথমিক শুল্ক বহাল রয়েছে। তবে যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের উপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেনি, তাদের জন্য ‘পুরস্কার’-এর কথা জানিয়েছেন মার্কিন কোষাগার সচিব স্কট বেসান্ত।
হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো জানিয়েছেন, আগামী ৯০ দিনে শুল্ক নিয়ে আলোচনায় বসবে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যেই ৫০টিরও বেশি দেশ এই বিষয়ে যোগাযোগ করেছে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে, যার মধ্যে ভারত অন্যতম। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে পূর্ণমাত্রায়।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের এই কৌশল অনেকটা দাবার চালের মতো। যেখানে একদিকে উত্তেজনা প্রশমনের বার্তা, অন্যদিকে চিনের উদ্দেশে কঠোর বার্তা স্পষ্ট। বিশ্ববাজারের ভবিষ্যত এখন অনেকটাই নির্ভর করছে আগামী ৯০ দিনের এই কূটনৈতিক দাবা-চালের উপর।
তালা ভাঙার পাল্টা তালা! কসবা থেকে হুগলি—চাকরিহারাদের ক্ষোভে কাঁপছে রাজ্য