চিনের মুখোশে হ্যাঁচকা টান!
এলএসিতে চিনের ফৌজের মোতায়েন নিয়ে নতুন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আমেরিকা, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। পেন্টাগনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষের পরও চিন তার সেনা সংখ্যা কমায়নি এবং এলএসিতে বর্তমানে প্রায় ১.২ লাখ পিএলএ (পিপলস লিবারেশন আর্মি) সেনা মোতায়েন রয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আবারও চিনের আগ্রাসন নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন।
চিনের বাহিনী এবং অস্ত্রের বিস্তার
পেন্টাগনের রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে, পিএলএ সেনারা আধুনিক ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলএসিতে অবস্থান করছে। তাদের কাছে ট্যাঙ্ক, হাউইটজার কামান, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং অন্যান্য উন্নত সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে। এছাড়া, অন্তত ২০টি সম্মিলিত অস্ত্র ব্রিগেডের উপস্থিতি এলএসির বিভিন্ন কৌশলগত এলাকায় যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যা লাদাখ এবং অরুণাচল প্রদেশের মতো এলাকাগুলিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি করেছে।
যুদ্ধের প্রস্তুতি এবং চিনের কৌশল
পেন্টাগন আরও জানিয়েছে, চিনের পশ্চিম থিয়েটার কমান্ড এলএসির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত ও চিনের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার মধ্যে বেশ কয়েকবার যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই সময়েই পিপলস লিবারেশন আর্মি তাদের সামরিক পরিকাঠামো আরও শক্তিশালী করেছে।
নতুন তথ্য এবং উত্তেজনা
পেন্টাগনের রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, কিছু পিএলএ ইউনিট এলএসি থেকে ছাউনিতে ফিরে গেলেও, বড় সংখ্যায় সেনা এখনও ওই এলাকায় মোতায়েন রয়েছে। এটি চিনের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটি অংশ, যেখানে তারা নিজেদের সামরিক অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাচ্ছে।
লাদাখ এবং গালওয়ান সংঘর্ষ
২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে চিন প্রথমবার আগ্রাসী মনোভাব প্রদর্শন করে। ওই সংঘর্ষে ভারতীয় সেনার ২০ জন সৈন্য নিহত হন, যার মধ্যে একটি কর্নেলও ছিলেন। এরপর ভারতীয় সেনা এলএসিতে তাদের উপস্থিতি আরও বাড়িয়ে দেয় এবং দুই দেশই নিজেদের সীমান্তে শক্তিশালী সামরিক পরিকাঠামো তৈরি করে। যদিও কিছু সময় পরই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়, কিন্তু এলএসির উত্তেজনা এখনও পুরোপুরি প্রশমিত হয়নি।
বেজিংয়ের পরমাণু শক্তি বৃদ্ধি
পেন্টাগন আরও দাবি করেছে, চিনের পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চিনের কাছে ৬০০টি পারমাণবিক অপারেশনাল ওয়ারহেড ছিল এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা হাজারে পৌঁছাতে পারে। এছাড়া, দূরপাল্লার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের (আইসিবিএম) সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি, চিন নতুন নতুন সামরিক প্রযুক্তি গ্রহণে মনোযোগী হয়েছে।
চিনের সামরিক আধুনিকীকরণ
পেন্টাগনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, চিনের সেনাবাহিনী সামরিক আধুনিকীকরণের ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে এবং শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে বহু নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ চলছে। মহাশূন্যে থাকা কৃত্রিম উপগ্রহ এবং মহাকাশ স্টেশন রক্ষা করার জন্য চিন নতুন উন্নত অস্ত্র তৈরি করছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি স্যাটেলাইট ক্ষেপণাস্ত্র এবং লেজারের মতো শক্তিশালী অস্ত্র।
তাইওয়ান এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
চিনের সামরিক মহড়া, বিশেষ করে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে, গত কয়েক বছরে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। পেন্টাগন দাবি করেছে, এর ফলে ওয়াশিংটন ও বেজিংয়ের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। পাশাপাশি, ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার সঙ্গে চিনের সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বেড়েছে।
পেন্টাগনের রিপোর্ট এবং বেজিংয়ের প্রতিক্রিয়া
এলএসি নিয়ে আমেরিকার এই রিপোর্ট প্রকাশের পর বেজিং এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বলেছেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভাল হচ্ছে, আর সেটিই আমেরিকার সহ্য হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, আমেরিকা যুদ্ধবাজ দেশ হিসেবে এই ধরনের ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে।
এভাবে এলএসিতে ১.২ লাখ চিনা সেনার উপস্থিতি, তাদের উন্নত অস্ত্রশস্ত্র এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি ভারতসহ বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে, প্রশ্ন উঠছে, আমেরিকা কোন তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছে এবং এই ধরনের রিপোর্টের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী হতে পারে?