চিকিৎসকদের সঙ্গে মমতার বৈঠক!
রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা সমস্যা ও বিতর্কের মধ্যেই সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসকদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসতে চলেছেন। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের নিয়ে আয়োজিত এই বৈঠক ঘিরে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে জল্পনা। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ-কাণ্ডের পর এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন চিকিৎসক মহল। তবে, ঠিক কী নিয়ে আলোচনা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বৈঠক নিয়ে বাড়ছে কৌতূহল
সোমবার কলকাতার ধনধান্য সভাগৃহে আয়োজিত এই বৈঠকে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যখাতে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামোগত ঘাটতি, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বল্পতা, সিনিয়র রেসিডেন্টদের বেতন বৃদ্ধির দাবি, পোস্টিং ও পদোন্নতি সংক্রান্ত অনিয়ম— এসব নিয়ে কি মুখ্যমন্ত্রী কোনও ঘোষণা করবেন?
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে থাকা গ্রিভান্স অ্যান্ড রিড্রেসাল কমিটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসকদের মতামত সংগ্রহ করেছে। সূত্রের খবর, বহু জায়গায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অসন্তোষের কথা শোনা গেছে। পরিকাঠামোগত সমস্যার পাশাপাশি জেলা স্তরের হাসপাতালগুলিতে নিরাপত্তার অভাব ও কর্মীসংখ্যা কম থাকার অভিযোগও উঠেছে।
কী বলবেন মুখ্যমন্ত্রী?
বৈঠকের আগে চিকিৎসকদের একাংশের কৌতূহল— মুখ্যমন্ত্রী কি শুধু সরকারি পরিসংখ্যান ও উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরবেন, নাকি বাস্তব সমস্যাগুলোর দিকেও আলোকপাত করবেন?
রাজ্যের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক ও চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর নিয়োগ, সঠিক বেতন কাঠামো ও কর্মপরিবেশের দাবিতে সরব হয়েছেন। এই বৈঠকে সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
হাসপাতালগুলোর হাল, চিকিৎসকদের ক্ষোভ
বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের তরফ থেকে যে যে সমস্যাগুলি উঠে এসেছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
✔ পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব
✔ জেলার হাসপাতালগুলিতে পরিকাঠামোর ঘাটতি
✔ সিনিয়র রেসিডেন্টদের বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতি সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা
✔ চিকিৎসকদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতা
✔ মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের জন্য হোস্টেল ও অন্যান্য সুবিধার অভাব
বিশেষ করে, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ও ছাত্ররা ‘হুমকি সংস্কৃতি’ এবং দুর্বল পরিকাঠামোর অভিযোগ তুলেছেন।
সংগঠনগুলির দাবি, আমন্ত্রণ পাননি অনেক চিকিৎসক
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস’ মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতের বিভিন্ন ঘাটতির কথা জানিয়ে দাবি তুলেছে—
✔ স্বাস্থ্য খাতে ৪০ শতাংশ চিকিৎসকের পদ ফাঁকা
✔ ৭০ শতাংশ কর্মবন্ধুর পদ শূন্য
✔ নির্দিষ্ট সময় অন্তর অনুমোদিত চিকিৎসক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন
✔ সরকারি হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও যন্ত্রপাতির গুণমান নিশ্চিত করা
যদিও, এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে কোনও চিকিৎসক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। ফলে, বৈঠক শুধুই প্রশাসনিক আলোচনা, নাকি চিকিৎসকদের সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ— তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
বৈঠকের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে চিকিৎসক মহল
বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী কী বার্তা দেবেন, তাঁর ঘোষণাগুলি কি বাস্তবায়িত হবে, নাকি শুধুই প্রতিশ্রুতির স্তরে রয়ে যাবে— তা জানতে উৎসুক চিকিৎসক মহল। এই বৈঠক থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কোনও গঠনমূলক সিদ্ধান্ত বেরিয়ে আসে কিনা, সেটাই এখন দেখার!
রবিবার মহারণ: ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথে কোন লড়াইয়ে নজর থাকবে সবচেয়ে বেশি?