Saturday, February 8, 2025

চাবাহার নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা: ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার নতুন ধাক্কা

Share

চাবাহার নিয়ে ভারতের দুশ্চিন্তা!

ইরানের চাবাহার বন্দর ভারতের জন্য দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞার ফলে সেই পথ আরও কঠিন হয়ে উঠছে। নয়াদিল্লি এখন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, কারণ চাবাহার বন্দরকে ঘিরে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে।

চাবাহার: ভারতের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতের জন্য চাবাহার বন্দর শুধু ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যম নয়, বরং এটি আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের একটি কৌশলগত পথ। পাকিস্তানকে পাশ কাটিয়ে ভারত যাতে সহজেই আফগানিস্তান এবং উজবেকিস্তানের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারে, তার জন্য চাবাহার একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর।

২০১৮ সাল থেকে ভারত ‘ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল লিমিটেড’ (IPGL) এর মাধ্যমে এই বন্দরের একটি অংশ পরিচালনা করছে। ভারতের সরকারের পরিকল্পনা ছিল চাবাহারকে একটি প্রধান ট্রানজিট হাব হিসেবে গড়ে তোলা, যা আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহণ করিডোরের (INSTC) গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু এখন ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে সেই পরিকল্পনায় বড়সড় ধাক্কা লাগতে পারে।

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতের বিপদ

ডোনাল্ড ট্রাম্প সদ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ইরানের সঙ্গে যে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ভারত চাবাহারে তার পরিকল্পিত বিনিয়োগ চালিয়ে যেতে পারবে কি না, তা এখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইরান পরমাণু অস্ত্রের উন্নয়ন চালিয়ে যাচ্ছে, যা যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না। এছাড়া ওয়াশিংটনের মতে, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে মদত দিচ্ছে, যা বিশ্বব্যাপী নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার ফলে চাবাহারে ভারতের বিনিয়োগ এবং কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

ভারতের বিনিয়োগ এবং ভবিষ্যৎ শঙ্কা

ভারত ইতিমধ্যে চাবাহার বন্দরে বিশাল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ২০২৪ সালে নয়াদিল্লি এবং তেহরানের মধ্যে একটি ১০ বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে বন্দরের উন্নয়নে ভারত কয়েক কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেয়। এছাড়া, চাবাহারের পরিকাঠামো উন্নয়নে ভারত অতিরিক্ত ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নীতির ফলে এই বিনিয়োগের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ভারত যদি এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চাবাহার বন্দর পরিচালনা চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তাকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়তে হতে পারে। ফলে নয়াদিল্লির সামনে দুটি প্রধান বিকল্প রয়েছে – হয় তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে চাবাহার থেকে সরে আসবে, নয়তো তারা কূটনৈতিকভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করবে।

মোদীর কৌশলগত পদক্ষেপ

এই পরিস্থিতিতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন, যেখানে চাবাহার ইস্যুটি অন্যতম আলোচনার বিষয় হতে পারে। ভারতীয় কূটনীতিকরা আশাবাদী যে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হয়তো কিছুটা সমঝোতা করা সম্ভব হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক বর্তমানে বেশ শক্তিশালী। তাছাড়া, ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে মোদীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখেন। এই ইতিবাচক দিকগুলো কাজে লাগিয়ে নয়াদিল্লি চাবাহারের নিষেধাজ্ঞা সমস্যার সমাধান খুঁজতে পারে।

উপসংহার

চাবাহার বন্দর নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ – এই দুইয়ের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা সহজ হবে না। এখন দেখার বিষয়, মোদী প্রশাসন কীভাবে কৌশলগত পদক্ষেপ নেয় এবং এই সংকটের সমাধান খুঁজে বের করে।

নিজেরাই শূন্য, কেজরীবাল ও সিসৌদিয়ার পতন, আতিশীর কান ঘেঁষে জয়!

Read more

Local News