Wednesday, May 28, 2025

চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে উত্তাল রাজ্য, কসবা থেকে মেদিনীপুর—বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ, বৈঠকে ডাক শিক্ষামন্ত্রীর

Share

চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াইয়ে উত্তাল রাজ্য!

রাজ্যে ফের উত্তপ্ত চাকরিহারাদের আন্দোলন। স্কুল পরিদর্শকের দফতরে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে পুলিশি হেনস্থা, লাঠিচার্জ আর গলাধাক্কার মুখে পড়লেন তাঁরা। ঘটনাস্থল কসবা—কিন্তু এই উত্তাপ ছড়িয়েছে হুগলি, মালদহ, মেদিনীপুর, নদিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুরেও। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, পুলিশ তাঁদের নির্দয়ভাবে পেটায়। কেউ বুকে-পেটে লাথি খেয়েছেন, কাউকে টেনে ফেলে দেওয়া হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে তা চোখে পড়লেও, সেই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদমাধ্যম।

রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্রিয়। মুখ্যসচিব বলেন, “এই ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। পুলিশকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে, যেন এই রকম আচরণ আর না হয়।” পাশাপাশি তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, সরকার চাকরিহারাদের পাশে রয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

অন্যদিকে, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই চাকরিহারাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, “একদিকে বৈঠকের জন্য অপেক্ষা, অন্যদিকে ধ্বংসাত্মক আন্দোলন—এটা চলতে পারে না। কিছুটা ধৈর্য ধরলেই একটা গঠনমূলক সমাধান সম্ভব।”

তবে পুলিশ পুরো ঘটনা নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছে। তাদের দাবি, কিছু বিক্ষোভকারী আচমকা দফতরের তালা ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করে, পুলিশের উপর হামলা চালায়। পুলিশের দাবি, ছ’জন কর্মী জখম হয়েছেন—চার জন পুরুষ, দুই মহিলা এবং একজন সার্জেন্ট এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হয়েই ‘হালকা বলপ্রয়োগ’ করা হয়েছে।

চাকরিহারাদের পক্ষে কথা বলছেন শিক্ষক প্রতাপ রায়চৌধুরী। তাঁর দাবি, “আমরা যোগ্য অথচ চাকরি হারিয়েছি। আজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছি, অথচ আমাদের লাঠি মেরে হেনস্থা করা হচ্ছে।”

জেলায় জেলায় প্রতিবাদও ছিল উত্তাল। হুগলিতে চাকরিপ্রার্থীরা স্কুল পরিদর্শকের দফতরের গেটে তালা ঝোলান, জিটি রোড অবরোধ করেন। মেদিনীপুর, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ ও মালদহেও একাধিক স্থানে বিক্ষোভ, গেটে তালা, রাস্তা অবরোধ—চিত্র প্রায় একই। কিছু জায়গায় পুলিশ হস্তক্ষেপে উত্তেজনা চরমে ওঠে।

এদিকে বিজেপি সাংসদ ও প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাওয়ার কথা থাকলেও, কসবার ঘটনার প্রতিবাদে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। বরং প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখা চিঠি ছিঁড়ে ফেলেন। ব্রাত্য বসু তাঁর এই সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে বলেন, “এসএসসি অফিসে যান, অথচ শিক্ষা দফতরে আসেন না—এ কেমন যুক্তি?”

এই রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টিতে বিভ্রান্ত চাকরিহারাদের একটি বড় অংশ। তাঁদের এখন একটাই দাবি—যোগ্যদের যেন পুনরায় চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আর প্রশাসনের প্রতি বার্তা, যেন আর কেউ পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত না হন।

সবমিলিয়ে, আন্দোলন-প্রশাসন-পুলিশ-পাল্টা রাজনীতি—এই চারপাশ ঘিরেই এখন রাজ্যজুড়ে ফের একবার উথালপাতাল। শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজতে প্রশাসন কতটা দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।

তালা ভাঙার পাল্টা তালা! কসবা থেকে হুগলি—চাকরিহারাদের ক্ষোভে কাঁপছে রাজ্য

Read more

Local News