চাকরি ও এসআইআর একসঙ্গে কীভাবে সম্ভব?
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR) শুরু হতেই রাজ্যের বুথ লেভেল অফিসার বা বিএলও (BLO)-দের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শনিবার কলকাতার কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। অভিযোগ, স্কুলে পড়ানো, পারিবারিক দায়িত্ব আর এখন আবার ভোটার তালিকার কাজ—সব একসঙ্গে সামলানো প্রায় অসম্ভব।
📢 বিএলও-দের মূল অভিযোগ
অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার অভিযোগ, স্কুলের নিয়মিত কাজের সঙ্গে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার এনুমারেশন ফর্ম বিলি করা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ।
“আমাদের বাড়িতে ছোট বাচ্চা আছে, রাত ১০টার পর বাইরে গিয়ে কাজ করা সম্ভব নয়,” — এক শিক্ষক-শিক্ষিকার বক্তব্য।
এছাড়াও অনেক মহিলা বিএলও জানিয়েছেন, নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ বাড়ছে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে হুমকি পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ।
🏫 কমিশনের অবস্থান: “বিহারে সম্ভব হলে বাংলায় নয় কেন?”
রাজ্য সিইও দফতরের তরফে জানানো হয়েছে,
“শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলের পাশাপাশি এসআইআরের কাজ চালিয়ে যাবেন—এটাই নিয়ম। বিহারে যদি সম্ভব হয়, পশ্চিমবঙ্গেও হবে।”
কমিশনের ব্যাখ্যা, এসআইআরের কাজটি দেশের ১২টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে একসঙ্গে চলছে, তাই ব্যতিক্রম করা যাবে না।
📊 বিএলও কাজের শর্ত ও পারিশ্রমিক
| বিষয় | বিবরণ |
|---|---|
| কাজের ধরন | বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা সংশোধন ফর্ম বিলি |
| পরিদর্শনের নিয়ম | প্রতিটি পরিবারে সর্বোচ্চ তিনবার যেতে হবে |
| দৈনিক কাজের লক্ষ্য | অন্তত ১০টি পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ |
| পারিশ্রমিক | এককালীন ₹১২,০০০ (আগে ₹৬,০০০) |
| সুপারভাইজারের সম্মানী | ₹১৮,০০০ |
কমিশনের মতে, যদি প্রতিদিন ১০টি পরিবার কভার করা যায় এবং শনি-রবিবার বেশি সময় ব্যয় করা হয়, তাহলে কাজ সহজেই সম্পন্ন করা সম্ভব।
⚖️ বাস্তব সমস্যা ও উদ্বেগ
বিএলওদের যুক্তি, অনেকেই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যান, তার পরে বাড়ি বাড়ি ঘোরা শারীরিকভাবে কষ্টকর। একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন,
“স্কুলের ইন্টারনাল পরীক্ষার খাতা দেখা, লেসন প্ল্যান, প্রশাসনিক কাজ—সব মিলিয়ে সময়ই পাওয়া যায় না।”
এছাড়াও, বিএলওদের একাংশ মনে করছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় চাপে কাজের পরিবেশ আরও কঠিন হয়ে উঠছে।
📰 কমিশনের প্রতিক্রিয়া
এক কমিশন আধিকারিক জানিয়েছেন,
“দেশজুড়ে এসআইআরের একই নিয়ম। নিজেদের চাকরির পাশাপাশি এই কাজ করতেই হবে।”
কমিশনের সূত্রে আরও জানা গেছে, বিএলওদের সমস্ত অভিযোগ দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। আপাতত কাজ বন্ধের অনুমতি বা ছাড়ের সম্ভাবনা নেই।
🔗 প্রাসঙ্গিক পাঠ
- ভারতের নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল নির্দেশিকা
- পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক সমাজে ক্ষোভ ও দাবি নিয়ে টেকনো স্পোর্টস বাংলা প্রতিবেদন
- কর্মজীবী নারীদের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উপায়
🟢 উপসংহার
একদিকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রক্ষার দায়িত্ব, অন্যদিকে শিক্ষকের পেশাগত ও পারিবারিক ভারসাম্য—এই দুইয়ের সংঘাতে পড়েছেন রাজ্যের শত শত বিএলও। কমিশন যেখানে নিয়মের কঠোর প্রয়োগে অনড়, সেখানে মাঠে কাজ করা মানুষজন খুঁজছেন বাস্তবসম্মত সমাধান। সময়ই বলবে, সেই সমাধান কতটা আসে।

